খনি শিল্পের চেয়েও ইউরোপের বাইসাইকেল শিল্পে এখন কর্মীর সংখ্যা বেশি, এমনকি ইস্পাত শিল্পের চেয়েও দ্বিগুণ।
সম্প্রতি ইউরোপীয় সাইক্লিস্ট ফেডারেশন (ইসিএফ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাইসাইকেল সম্পর্কিত অর্থনীতিতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি কর্মী, যারা সাইকেল নির্মাণ, পর্যটন, খুচরা, অবকাঠামো ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বিপরীতে খনি শিল্পে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৫ হাজার এবং ইস্পাত শিল্পে ৩ লাখ ৫০ হাজার।
ইউরোপের পরিবহন খাতে সাইকেলের অংশ এখনো ৩ শতাংশে সীমাবদ্ধ। যদি এ হারকে দ্বিগুণ কর যায়, তাহলে ২০২০ সাল নাগাদ এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সংস্থাটির হিসাব মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) ২৭টি দেশে সাইক্লিংয়ের কারণে অর্থনীতিতে সাশ্রয় হয় বার্ষিক ২০৫ বিলিয়ন ডলার।
ইসিএফের উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক কেভিন মেইন বলেন, ‘পরিবহন, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যসেবার চেয়েও
বাইসাইকেল খাতে বাজেট বরাদ্দ করা আরো বেশি যৌক্তিক। আমরা এখন পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, যখন আপনি একটি সাইকেল লেন এবং একজন সাইক্লিস্ট তৈরি করবেন, তখন তা কর্মসংস্থানে বিপুল ভূমিকা রাখতে পারবে। এ খাতে বিনিয়োগ করলে তা পরিবহন খাতের অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় বহুগুণে মুনাফা ফিরিয়ে দেবে।’
প্রতিবেদনটির মতে, পরিবহন খাতের অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় সাইক্লিংয়েই কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৃদ্ধির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইসিএফের মতে, সাইকেল শিল্পে প্রবৃদ্ধি আর যে কোনো পরিবহন খাতের তুলনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনতে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।
বর্তমানে ইউরো অঞ্চলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, তার অধিকাংশই সম্পন্ন হচ্ছে বাইসাইকেল সম্পর্কিত পর্যটন খাতে। হোটেল ও রেস্টুরেন্টে এ সংশ্লিষ্ট কর্মীর সংখ্যা এখন ৫ লাখ ২৪ হাজার। বিপরীতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুচরা বিক্রয় খাতে জড়িত আছেন ৮০ হাজার। প্রতি মিলিয়ন ইউরো টার্নওভারে একটি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির তুলনায় তিন গুণ কর্মী নিয়োজিত থাকেন একটি বাইসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে।
ইসিএফ জানাচ্ছে, ই-বাইকের মতো নতুন উদ্ভাবনের পাশাপাশি পরিবহন খাতে নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রম জোরদার করলে এবং সাইক্লিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নত করলে এ শিল্প আরো প্রস্ফুটিত হতে পারে। বর্তমানে ইউরোপের পরিবহন বাজেটের ১০ শতাংশ এ শিল্পে বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছে ইসিএফ।
সার্বিকভাবে অন্য যে কোনো শিল্পের তুলনায় ভৌগোলিকভাবে এ শিল্পের কর্মসংস্থান অনেক বেশি স্থিতিশীল। বিশেষ করে স্বল্প দক্ষ কর্মীরা এ শিল্পের শ্রমবাজারে বেশ সহজেই প্রবেশ করতে পারেন। তাছাড়া কর্মসংস্থান ছাড়াও এ শিল্প স্থানীয় অর্থনীতি উন্নয়নে আরো ভূমিকা রাখতে পারে। ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড মোবিলিটি লুভেন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় বরং সাইক্লিংই স্থানীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। কারণ গাড়ি বা অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের তুলনায় সাইক্লিস্টরা সহজেই স্থানীয় দোকান ও রেস্টুরেন্টে গমন করতে পারে।