বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাফল্য নিয়ে অনেকের সন্দেহ না থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য সে অর্থে আসেনি ‘আপেক্ষিকতা’ তত্ত্বের জনকের। বিশেষত প্রথম বিয়ের পর জীবনের ১১টি বছর একরকম নিষ্ফল মনে হয়েছে তাঁর কাছে। প্রথম স্ত্রী ও সহকর্মী-বিজ্ঞানী মেলিভা মেরিকের সঙ্গে আইনস্টাইনের ১১টি বছর কেটেছে বলতে গেলে সন্তানদের স্বার্থেই।
‘আইনস্টাইন: হিজ লাইফ অ্যান্ড ইউনিভার্স’ নামের একটি বইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত লেখক ওয়াল্টার ইসাকসন এ তথ্য জানিয়েছেন। সদ্যপ্রকাশিত বইটিতে ইসাকসন দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি সুসংহত প্রেমময় জীবনযাপন করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন আইনস্টাইন।
ইসাকসনের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ বছরের বিবাহিত জীবনের একপর্যায়ে আইনস্টাইন তাঁর ভালোবাসা নিবেদনের মাধ্যম হিসেবে স্ত্রী মেরিক ও নিজের জন্য বেশ কিছু নিয়মের তালিকা তৈরি করেন। তবে তার সবটাই হয়েছে কেবল সন্তানদের স্বার্থে এবং সেগুলো ছিল একরকম চাপিয়ে দেওয়া। সেই নিয়ম মানলে মেরিককে অনেকটা মধ্যযুগের দাসীদের মতো জীবনযাপন করতে হতো।
পুরো ইউরোপে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান চর্চায় নারীদের মধ্যে অগ্রদূত ছিলেন মেরিক। তবে বিয়ের ১১ বছর পর যখন মনে হয়েছে, তাঁকে বিয়ে করার বিষয়টি ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, তখনই ১৯১৪ সালে আইনস্টাইন নিয়মের তালিকা তৈরি করেন।
ইসাকসনের বই অনুযায়ী, পদার্থবিজ্ঞানী তাঁর তালিকায় নিজ রুম পরিপাটি করা, দিনে তিনবার কক্ষে খাবার দেওয়া, কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রাখা এবং শয়নকক্ষ ও পড়াশোনার টেবিল গুছিয়ে রাখার নির্দেশ দেন স্ত্রীকে। একই সঙ্গে মেরিককে নিজ ডেস্ক ব্যবহার না করতেও নির্দেশ দেন তিনি।
তবে আইনস্টানের ওই নির্দেশনার পর মেরিক দুই ছেলে হ্যান্স আলবার্ট ও অ্যাডওয়ার্ডকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে পাড়ি জমান। এর পরপরই বিবাহ-বিচ্ছেদের কাগজপত্র পাঠান মেরিক। তবে আইনস্টাইন বিয়ে বিচ্ছেদে সম্মতি দেন ১৯১৯ সালে।
ইসাকসন তাঁর বইয়ে আরও উল্লেখ করেন, স্ত্রীর সঙ্গে সখ্য না থাকায় ১৯১২ সালেই ইলসা নামে এক জ্ঞাতি বোনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আইনস্টাইন। ১৯১৯ সালে ইলসাকে বিয়ে করেন তিনি। এর চার বছর পর নিজ সহকারী ও বন্ধুর আত্মীয় বিট নিউম্যানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন স্বামী হিসেবে আপাত ‘ব্যর্থ’ আইনস্টাইন।
ইসাকসন আরও উল্লেখ করেছেন, ‘পরিবারের সুখ-শান্তির উপায় বের করতে আইনস্টাইনকে যেভাবে ঘুরপাক খেতে হয়েছে, তার চেয়ে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব উদঘাটন তাঁর কাছে সহজ হয়েছে।’