পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হিজড়া তাহমিনা, সুস্মিতা, সুমি, সানজিদা ও
তাদের বন্ধুরা ইতোমধ্যে ঈদ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সুমি ও সানজিদা এবার
নিজের পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে। মা, ভাই-বোনের সঙ্গে ঈদ
আনন্দ ভাগ করে নিতে চায় স্থানীয় তাহমিনাও। সুস্মিতা বাবা-মায়ের সঙ্গে
আনন্দ করতে চায় আসছে দূর্গা পুজোয়। এদের সকলেই এই প্রথম পরিবার পরিজন
নিয়ে ঈদ উদযাপন করবে। তাহমিনা জানান, ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর সরকার
হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা
দেয়ার আশ্বাসে পরিবার-পরিজন তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবছে। ঈদ উপলক্ষ্যে
বাড়িতে ফেরার তাড়া করছে স্বজনরা। সুমি ও সানজিদার কেনাকাটাও ইতোমধ্যে শেষ
হয়েছে। দল নেতা তাহমিনা জানায়, স্থানীয় মার্কেট থেকেই পছন্দের সবকিছু
কিনতে হয়েছে। জীবনের বহু বছর ভারত থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন। এবার
পরিবারের অনেকের জন্য কিনতে হয়েছে। তেমন কিছু কেনাকাটা বাকি নেই। ঢাকা
থেকে আসা সুস্মিতাকে নিয়ে ঈদ করবে তাহমিনা। গত বছর স্থানীয় হিজড়া সুমা ও
ঢাকার সানজিদাকে নিয়ে তাহমিনা ঈদ উদযাপান করেছে। উপজেলায় হিজড়া স্থানীয়
দু'জনসহ মোট ১৩ জনের আনাগোনা হয়। প্রতি ঈদে সকালে ঘুম থেকে ওঠে গোসল সেরে
স্যালোয়ার, কামিজ, ওড়না কিংবা পেডিকোট, ব্লাউজ ও শাড়ি পরে প্রতিবেশী,
মেহমান ও বন্ধুদের সঙ্গে দিনভর আড্ডা ও টিভি দেখে ময় কাটায়। উপজেলা
সদরের গাজি বাড়ীর প্রায়ত ফজলুল হক গাজীর পুত্র সন্তান হিসেবে জন্ম নেয়ার
৭/৮বছর বয়স থেকে হিজড়া অপবাদে ঘর ছাড়ে তাহমিনা। বাবা-মা, ৪ ভাই ও ১ বোন
নিয়ে ছিল সংসার। প্রায় ২০ বছর পূর্বে বাঁধন হিজড়া সংঘের সদস্য হয়
পঞ্চাশোর্ধ বয়সী তাহমিনা। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার
নিবারণ দাসের ৪ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে এক ছেলে হিজড়া হবার বিষয়টি
পরিলক্ষিত হয়। সুস্মিতা (৩২) ২০০২ সালে বাঁধন হিজড়া সংঘে নাম লেখায়। তিনি
জানায়, ঈদ নিজের মধ্যে থাকতেই ভাল লাগে। মুরগী তা দিয়ে হাঁসের ডিম ফুঠোয়।
কিন্তু তার বসবাস হয় পানিতে হাঁসের সাথে। আমারও অবস্থান এখানে। তবে
দূর্গা পুঁজায় বাড়িতে যাব। একই এলাকার অপর জন সুমি (১৮) দশমিনা ৪ মাস।
সংগঠনের হয়ে ঘুড়ছে ৭/৮ বছর ধরে। সুস্মিতা তাকে ভালবাসে। সানজিদা প্রায় ৫
বছর পূর্বে এসে আর কোথাও যায়নি। দলনেতা তাহমিনার প্রিয় ভাজন। তাই
তাহমিনার সাথে থাকে সার্বক্ষণিক। ঈদ কাটাবে তার সাথে। এদিকে স্থানীয় আরেক
হিজড়া সুমা (৩০) তাহমিনার বিরাগভাজন হয়ে বেতাগী-সানকিপুর এলাকায় চাঁদা
তোলে। থাকে উপজেলার নলখোলা বাস ষ্ট্যান্ডে। ঈদে থাকবে নিজ বাড়িতে।
হিজড়াদের নিয়ে অনেকের মধ্যে অনীহা থাকলেও স্থানীয় সমাজ সেবক আঃ মোমেন
তালুকদার মাঝে মধ্যে তাদের বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নেন এবং সহযোগিতার চেষ্টা
করেন বলেও তাহমিনা এ প্রতিনিধিকে জানান।
নিপুণ চন্দ্র, nipunch@gmail.com