গুজরাট, ১৪ মার্চ- অবশেষে ইতিহাস রচনা করলো গুজরাটের পতিতাদের গ্রাম ওয়াদিয়া। সে গ্রামের পতিতারা রোববার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ফিরে গেলেন সামাজিক জীবনে। এর মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে ওই গাঁয়ের ওপর যে কালিমা লেপন হয়েছিল তা মুছে গেল। রোববার পতিতাদের গণবিয়ের আয়োজন করা হয়। ফলে এর আগে ঠিকই যে গ্রামের দিক থেকে মানুষ এতকাল মুখ ঘুরিয়ে রাখতো সে গ্রামেই হলো তাদের ওই বিয়ের আয়োজন। তাতে বর আসলেন গুজরাটের রীতি অনুযায়ী কোমরে তরবারি সজ্জিত, মাথায় পাগড়ি পরে। তারা একে একে ২১ পাত্রীর পাণি গ্রহণ করে তাদের ঘরে তুলে নিলেন। তবে বর ও কনের বেশির ভাগেরই বয়স ১২/ ১৩ বছরের মধ্যে। এ নিয়ে চারদিকে সরস আলোচনা। বিয়ে উপভোগ করতে আশপাশ থেকে সমবেত হয়েছিলেন কয়েক হাজার অতিথি। উপস্থিত হয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। এ অনুষ্ঠানে ৮ যুগল সরাসরি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুরু করেছেন নতুন জীবন। ১৩ যুগল এনগেজমেন্টের মাধ্যমে তাদের সম্বন্ধকে পাকাপোক্ত করেছেন। এ ঘটনা ঘটেছে ভারতের গুজরাটের পালানপুর শহর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ওয়াদিয়ায়। বনশকান্ত জেলার উন্নয়ন বিষয়ক কর্মকর্তা বিজয় ভাট বলেছেন, যুগ যুগ ধরে এই সমপ্রদায় পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তাদের কাছে এ পেশাটি ছিল খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের মাঝে কখনও ধারণাও জন্মেনি যে তারা ভুল পথে হাঁটছেন। কিন্তু তাদের এই পথচলা ছিল ভুল। অসভ্যের। এসব মেয়েকে বিবাহ দিয়ে এবং তাদের এনগেজমেন্ট করিয়ে আমরা তাদের পুরনো প্রথা ভাঙতে চাইছি। যখন কোন মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে তখনই তাকে পতিতার পেশা ছাড়তে হবে। এমনকি যে এনগেজমেন্ট সম্পন্ন করেছে তাকেও এই পেশা ছাড়তে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বর ও কনেরা ছিল উজ্জ্বল পোশাক পরা। মেয়েরা পরেছিল স্কার্ট, ব্লাউজ, গহনা। তারা বসেছিল একটি পর্দার আড়ালে। পর্দার অন্যপাশে বসা ছিল বররা। তাদের পোশাক হিন্দুরীতির। মাথায় পাগড়ি। এ গাঁয়ে বসবাস করে সারানিয়া সমপ্রদায়ের লোকজন। ১৯৪৭ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের আগে থেকেই তারা নানা রকম কাজ করতেন। তবে সারানিয়া সমপ্রদায়ের নারীরা গুজরাট ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য রাজস্থানের পরস্পর বিরোধী ওয়ারলর্ডদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হতেন। তারা তাদের নেচে-গেয়ে আনন্দ দিতেন। এমনকি তাদের শারীরিক চাহিদাও মিটাতেন। তারপর তারা শরীরকেই পুঁজি হিসেবে বেছে নেন। স্বাধীনতার পর তাদেরকে সরকার সম্মানজনক উপায়ে উপার্জন করে বেঁচে থাকার জন্য জমি দিয়েছিল। কিন্তু তারা দেহব্যবসা করে টাকা উপার্জনকে সহজ মাধ্যম হিসেবে দেখেছে। ফলে ওয়াদিয়া গ্রামের পুরুষরা তাদের সংসারের সব নারীকে এ ব্যবসায় নামাতে থাকে। এ অবস্থায় সমাজকর্মীরা এগিয়ে আসেন। তারা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ৯ লাখ রুপি। তা দিয়েই তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোর পথ দেখানো হলো।