ক্ষুধার তাড়নায় নিজেকে ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে ছোট্ট শিশু ছটু কুমারের (৬) পক্ষে। ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নেই। তাই অবুঝ ছটু ক্ষুধা মেটাতে খুঁজে নিয়েছে রাস্তার কুকুরের দুধ। আনন্দের সঙ্গে সে পান করছে কুকুরের স্তন্য। এজন্য যেন কোন কষ্ট না হয় তাই কৌশল করে হাঁটু গেঁড়ে বসে সে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো-কুকুরের মতো প্রাণী বঞ্চিত করেনি মানব সন্তানকে। তাকে সুযোগ দিচ্ছে ক্ষুধা মেটানোর। ছটু বলেছে, আমরা খুবই দরিদ্র। মাঝে মাঝে প্রচুর ক্ষুধা পেলে ঘরে যখন খাবার থাকে না তখন আমি তার দুধ পান করি। কুকুরটি আমাকে কামড়ায় না। আমি তাকে ভালবাসি। সেও আমাকে ভালবাসে। সে (কুকুর) আমার সঙ্গে তার একটি বাচ্চার মতোই ব্যবহার করে। কভার এশিয়া প্রেসকে বলেছে ছটু কুমার। সে আরও বলেছে, আমি কুকুরদের সঙ্গে খেলতে ভালবাসি। তারা আমার বন্ধু। পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ডের শিশু ছটু কুমার তার মা শনিচ্চরি দেবী, দাদি অমীয় দেবী ও দুই ভাই ভোলা (১৪), মহেশ (৩)’র সঙ্গে থাকে।
চার বছর আগে তার বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারটি কঠোর দারিদ্র্যতার মধ্যে পড়ে। তার ভাই ভোলা বাধ্য হয়েই পাশের একটি হোটেলে কাজ করে। তবে সে মাত্র ১২শ’ রুপি বেতন পায়। ছটুর মা ও দাদি বনে কাঠ ও প্রাকৃতিক খাবার খুঁজতে যায়। কিন্তু তাদের নিয়মিত খাবার কোন রকমে রুটি-সবজি জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছটুর পেট দেখেই বোঝা যায়, কেমন ক্ষুধার্ত থাকে সে।
ইউনিসেফের মতে ভারতের ঝাড়খণ্ডে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯০ ভাগই মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। প্রতি বছর সেখানে ২৫ হাজার শিশু মারা যায়। দুই বছর আগে থেকে কুকুরের দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে ছটুর। সে স্কুলে যায় না। ফলে তার কোন বন্ধুও নেই। ছটুর মা শনিচ্চরি বলেন, ছেলেকে প্রথমবার কুকুরের দুধ পান করতে দেখার আগে কয়েকদিন তাদের ঘরে কোন নরম খবার বা দুধ খাওয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমি তাকে প্রথমবার দেখে তাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে তার যখন ক্ষুধা পায় তখন সে এটি করে। তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। কারণ আমি জানি সে কেমন ক্ষুধার্ত থাকে।
স্থানীয় মানুষ আশঙ্কা করছেন, তাকে দেখে অন্য ছেলেরাও এমনটি করতে পারে। তাকে বোঝানো হয়েছে এর ফলে সে অসুস্থ হয়ে মারা যাবে। কিন্তু এসবে কোন কাজ হয়নি। ফলে তাকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে যেখানে সে ফ্রি খাবার পায়। একই সঙ্গে তার পরিবারকেও ফুডকার্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন কুকুরটি ছটুর সঙ্গে খেলতে আসে তাদের বাড়িতে। এবং দুধ পান করাও তার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে।