ফুরিয়ে আসছে বন উজাড় করে ফসলি জমি নষ্ট করে সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরির দিন। ভাটা ছাড়াই মেশিনের মাধ্যমে এবার তৈরি হবে ইট। বাঁচবে বনের গাছ। পরিবেশ থাকবে দূষণমুক্ত। নষ্ট হবে না ফসলি জমি। পরিবেশ বান্ধব এই ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করেছেন কিশোরগঞ্জের শামছুল আলম। আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে আবিষ্কৃত মেশিনে ১১ থেকে ১৪ জন লোক দিয়ে দৈনিক থেকে ১৬ হাজার ইট তৈরি করা যাবে। ব্যাপকভাবে মেশিন ব্যবহার হলে ফসলি জমি নষ্ট করে ইটের ভাটা দেয়ার দরকার হবে না। ফলে ইটের ভাটার কবল থেকে বাঁচবে হাজার হাজার একর ফসলি জমি।  প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে এসে কাঠখড়িবিহীন আগুনে পোড়ানো ছাড়াই ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কার করে জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার গাইটাল এলাকার মোঃ শামছুল আলম। তার উদ্ভাবিত ইট তৈরির মেশিন এখন জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ইটাখোলায় ইট তৈরির কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শামছুল আলমের মেশিন। তার   আবিষ্কার ইট তৈরিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এরই মাঝে শামছুল আলম বাংলাদেশ হেভকো অ্যান্ড ডিসকভারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে একটি কারখানা খুলেছেন। এখান থেকে তিনি গ্রাহকদের জন্য তৈরি করছেন ইটের মেশিন।ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কারক মোঃ শামছুল আলম জানান, ২০০৪ সালে নিজ ব্যবসার ঘাটতি পোষাতে সৌদি আরব যান। সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে তিন বছর চাকরি করে আর্থিকভাবে সফল না হতে পেরে হতাশ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে আসার পর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের এসবিএম ব্রিকসে মেশিনারিজ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকরি নেন। সেখানেই তিনি ইঞ্জিন নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন এবং ইট তৈরির মেশিন আবিষ্কারের পরিকল্পনা করেন।শামছুল আলমের অটোব্রিকসে যত শক্ত মাটি দেয়া যাবে ইট ততো ভালো হবে। ৩০ ঘোড়া পাওয়ারের একটি মেশিনে প্রতিদিন থেকে ১০ হাজার ইট তৈরি করা যায়। লোকবল প্রয়োজন হয় মাত্র ১১ জন। আর ২৫ ঘোড়া পাওয়ারের মেশিনে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ হাজার ইট তৈরি করা যায়। লোকবল প্রয়োজন মাত্র ১৪ জন, যা সাধারণ ইটখোলা থেকে তুলনামূলক অনেক কম খরচ সাশ্রয়ী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।  সাশ্রয়ী  প্রমাণিত হওয়ায় বর্তমানে শামছুল আলমের আবিষ্কৃত মেশিনগুলো স্থানীয় ইটখোলায় ব্যবহৃত  হচ্ছে। কেউ অর্ডার দিলে মেশিন তৈরি করে তিনি নিজে পৌঁছে দেন নির্দিষ্ট ঠিকানায়। পর্যন্ত তিনি দশটি মেশিন তৈরি করে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার আবিষ্কৃত দুটি মেশিন জেলার চৌদ্দশত এলাকার এসবি ব্রিকস মিলে একটি মেশিন দ্বারা বিন্নাটির ডিএনএম ব্রিকস মিলে ইট তৈরি করা হচ্ছে। তিনি একটি ৩০ ঘোড়া মেশিন আড়াই লাখ টাকা ২৫ ঘোড়া মেশিন তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন।  শামছুল আলমের আবিষ্কৃত ইট তৈরির মেশিন পরিবেশবান্ধব। মেশিনে ইট তৈরিতে খরচ কম এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় লাভও বেশি হয়।   মেশিনে ইট তৈরি করতে শ্রমিকের সংখ্যাও কম লাগে। মেশিন চালাতে কোনো টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন হয় না। নিজে নিজেই যে কেউ মেশিন চালাতে পারে। সহজ পদ্ধতিতে নিজের পছন্দমতো ইট তৈরি করা যায়।শামছুল আলম হার মানেননি বয়সের কাছে। জীবনযুদ্ধে তিনি আজ জয়ী। স্বল্প খরচে ইট তৈরি করতে পারা শামছুল আলমের মেশিন একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে, অন্যদিকে তেমনি ইট শিল্পে এনে দেবে এক নতুন মাত্রা। তার বিশ্বাস, সহযোগিতা পেলে তার   আবিষ্কার একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হবে।যেভাবে শুরু : এসবিএম ব্রিকসে কাজ করতে গিয়ে শামছুল আলম লক্ষ্য করেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট তৈরিতে মালিকদের লোকসান এবং শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম হয়। বিষয়গুলো থেকে উত্তরণের জন্য বিকল্পভাবে মেশিনের সাহায্যে ইট তৈরির উদ্যোগ নেন। আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসায় ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত  লেখাপড়া করা শামছুল আলম কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি করেন ইট তৈরির মেশিন। ফিনিয়াম, সেভ, সিট, অ্যারগন চ্যানেল এমএস ট্রিটলের সংমিশ্রণে তৈরি করেন ইট তৈরির মেশিন। যার নাম দিয়েছেন অটো ব্রিকস। প্রথমে দুই ছিদ্রবিশিষ্ট ইট তৈরি করলেও বর্তমানে এসবিএম নামযুক্ত ইট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।যোগাযোগ : শামছুল আলম, বাংলাদেশ হেভকো অ্যান্ড ডিসকভারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, কিশোরগঞ্জ। মোবাইল-০১১৯-০৮৩৩৩০১
- শফিক বাশার সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৩      
 
Top