মোঃ সাফায়েত হোসেন:
অসাধারণ একটি বছর শেষে আবারও বর্ষসেরা
ফুটবলারের পুরস্কারটা উঁচিয়ে ধরলেন লিওনেল মেসি। নেইমার ও ক্রিস্তিয়ানো
রোনালদোকে হারিয়ে ২০১৫ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন বার্সেলোনার এই
ফরোয়ার্ড। সোমবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে মেসির হাতে পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়।এবার
দিয়ে পঞ্চমবারের মতো বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব জিতলেন বার্সেলোনার এই
তারকা। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত টানা চারবার পুরস্কারটি জিতেছিলেন।পুরস্কার
হাতে নিয়ে মেসি বলেন, “দর্শকের সারিতে বসে ক্রিস্তিয়ানোকে জিততে দেখার পর
আবার আরেকটি ব্যালন ডি’অর জেতা, আবার এখানে এই মঞ্চে ফিরে আসাটা আমার জন্য
খুবই বিশেষ একটা মুহূর্ত।”আরাধ্য পুরস্কারটি নিজের করে নিতে মেসি পেয়েছেন মোট ৪১.৩৩ শতাংশ ভোট। রোনালদো ২৭.৭৬ শতাংশ আর নেইমার ৭.৮৬ শতাংশ ভোট পান।২০০৯ সালে ফিফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’ অর পুরস্কার আলাদাভাবে জিতেছিলেন
মেসি। পরে টানা তিন বছর একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতে প্রথম ফুটবলার
হিসেবে টানা চারবার বর্ষসেরা হওয়ার ইতিহাস গড়েন এই আর্জেন্টাইন তারকা। পরের দুই বছর পুরস্কারটি নিজের করে নেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। জাতীয়
দলের হয়ে অবশ্য ২০১৫ সালটাও হতাশার মাঝেই শেষ হয় মেসির। আগের বছর
বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পর এ বছর কোপা আমেরিকায়ও ফাইনালে হেরে দেশের হয়ে
প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভাঙে তার। তবে ক্লাবের হয়ে সময়টা দুর্দান্ত
কাটে ২৯ বছর বয়সী তারকার। গত মৌসুমে বার্সেলোনাকে ‘ট্রেবল’ জেতাতে অসাধারণ
অবদান রাখা মেসি ক্লাবের হয়ে পরে আরও দুটি শিরোপা জেতেন। কোপা দেল রে, লা
লিগা, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও সবশেষ গত ডিসেম্বরে
বার্সেলোনা জেতে ক্লাব বিশ্বকাপ। দুই মাস চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকলেও গেল বছরে সব মিলিয়ে ৬১ ম্যাচ খেলে ৫২ গোল করেন মেসি। সতীর্থদের দিয়ে ২৬টি গোল করানও তিনি। গোল
করার দিক থেকে অবশ্য গত বছরের মতো এবারও মেসির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন রোনালদো,
দেশ ও ক্লাবের হয়ে ৫৭ ম্যাচে ৫৭টি। এ সময়ে সতীর্থদের দিয়ে ১৭টি গোল করান
২০১৩, ২০১৪ সালের ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জেতা এই তারকা। মোট হিসেবের
মতো লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও মেসির চেয়ে বেশি গোল রোনালদোর। গত বছর
লিগে রোনালদোর গোল ৩৭টি, মেসির ৩৪টি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের গোল
যথাক্রমে ১৬ ও ৫। গোল করার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ ও দলের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে
জ্বলে ওঠার বিচারে মেসি ছিলেন অনন্য। গত মৌসুমের শেষ দিকে আতলেতিকো
মাদ্রিদের বিপক্ষে তার জয়সূচক গোলেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয় বার্সেলানার।
কোপা দেল রের ফাইনালেও জোড়া গোল করেন তিনি, যার একটি ছিল অসাধারণ।২০১৫ সালে সংখ্যায় মেসি:
# ৬১ ম্যাচে ৫২ গোল, সতীর্থদের দিয়ে করান ২৬ গোল।
# সব টুর্নামেন্ট মিলিয়ে প্রতি ১০১ মিনিটে একটি গোল করেন এবং প্রতি
২০২ মিনিটে একটি গোল করান।
# শুধু লা লিগায় প্রতি ৮০ মিনিটে গোল করেছেন একটি। এই হার ইউরোপের
শীর্ষ পাঁচটি লিগে কমপক্ষে ১০টা গোল করেছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা।
# ২০১৫ সালে ইউরোপের ছয়টি ক্লাব টুর্নামেন্টের সবকটিতে গোল করেন,
তার মধ্যে বার্সেলোনা জেতে পাঁচটি।
# লা লিগায় মোট ৪৯টি গোলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মেসি; ৩৪টি করেন
ও ১৫টি করান। যা ২০১৫ সালে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর
সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ। |
এ মৌসুমের শুরুতেও সেই বিধ্বংসী রূপ ধরে রাখেন
আর্জেন্টাইন তারকা; গত অগাস্টে উয়েফা সুপার কাপে সেভিয়ার বিপক্ষেও জোড়া গোল
করেন। আর কিছু দিন আগে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালেও রিভার প্লেটের জালে
বল জড়ান তিনি। গত বছরে বার্সেলোনার 'ট্রেবল' জয়ে অসাধারণ অবদান ছিল
নেইমারেরও। এ সময়ে ক্লাবের হয়ে ৫৩ ম্যাচ খেলে মোট ৪১টি গোল করেন তিনি।
সতীর্থদের দিয়ে ১৬টি গোল করান ২৩ বছর বয়সী এই তারকা। আর দেশের হয়ে ৯ ম্যাচে
৪ গোল করেন ব্রাজিল অধিনায়ক। ফুটবল বিষয়ক সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল
১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা ফুটবলারকে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দিত। ২০০৭ সাল
থেকে পুরস্কারটি দেয়া হয় বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে। ২০১০ সাল থেকে
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে একীভূত হয়ে এর নাম হয় ফিফা ব্যালন ডি’অর।
বিজয়ীরা নির্বাচিত হন ফিফার ২০৭টি সদস্য দেশের জাতীয় দলগুলোর অধিনায়ক ও কোচ
এবং ফিফা ও ফ্রান্স ফুটবল সামায়িকীর বাছাই করা ক্রীড়া সাংবাদিকের ভোটে। মেয়েদের
ফুটবলে বর্ষসেরার পুরস্কার জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার কার্লি
লয়েড। দেশটির তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এই পুরস্কার জিতলেন তিনি।
আগের ১০ বারের বিজয়ীরা:
সাল | ফিফা বর্ষসেরা | ব্যালন ডি'অর |
২০০৫ | রোনালদিনিয়ো | রোনালদিনিয়ো |
২০০৬ | ফাবিও কান্নাভারো | ফাবিও কান্নাভারো |
২০০৭ | কাকা | কাকা |
২০০৮ | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো |
২০০৯ | লিওনেল মেসি | লিওনেল মেসি |
| একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর |
|
২০১০ | লিওনেল মেসি |
|
২০১১ | লিওনেল মেসি |
|
২০১২ | লিওনেল মেসি |
|
২০১৩ | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো |
|
২০১৪ | ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো | |