বিধবা নারী ও কিশোরী কন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত।
শনিবার বিকালে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে কটিয়াদীতে সংখ্যালঘু বিধবা নারী ও কিশোরী কন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা এবং এ ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টার জন্য প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে।
অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘শুধু এজাহার নয়, হাসপাতালে যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনে দেয়া ওই নির্যাতিতা নারী যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে এটি জামিনযোগ্য অপরাধের মামলা নয়। তারপরও এজাহারটি জামিনযোগ্য অপরাধের আওতায় নেয়া হলো কেন? আমরা এর তদন্ত চাই।’
তিনি বলেন, ধর্ষণ করলেই যে, শুধু নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হবে তা নয়। কোনো নারীর কোনো অঙ্গে কোনোভাবে কোনো বস্তু দিয়েও যদি স্পর্শ করা হয়, সেটিও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের আওতায় পড়বে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, কোথাও একটা কিন্তু আছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, আমি এজাহারটি পড়েছি, আমি মেয়েটিকে হাসপাতালে নেয়ার পর তার করুণ আর্তনাদ ও আহাজারি যমুনা টেলিভিশনে শুনেছি। এটা দেখে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, আসামি গ্রেফতার হওয়ার পরের দিন কেন জামিনে পেল? এর জবাব আজকে সবাইকে দিতে হবে, কারণ এ অপরাধ জামিনযোগ্য অপরাধ নয়।
রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আমরা সব ঘটনার তদন্ত চাই। একদিকে আসামি ধরা হবে, আরেক দিকে বেরোনোর পথ খোলা রাখা হবে এটি হবে না। সামনে নির্বাচন ইতিমধ্যেই মন্দির জ্বালানো শুরু হয়েছে ও সংখ্যালঘু নির্যাতন শুরু হয়ে গেছে। এসব ঘটনার জন্য প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে।
সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, এ রকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আমার জীবনে কম দেখেছি। বাবা-চাচা ও সন্তান মিলে একটা দুষ্কর্ম করবে, অমানবিক আচরণ করবে, মা ও কন্যাকে একসঙ্গে পাশবিক নির্যাতন করবে, ওই পাক বাহিনীর অনুচররা কোথায় ছিল এত দিন? আমার মনে হয় তারা কোনো দলে ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে।
কটিয়াদী উপজেলা সদরে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি পূরবী মজুমদার, মনিন্দ্রনাথ, জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামের বিধবা নারী ও কিশোরী কন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা যুগান্তর ও যমুনা টিভিতে প্রচারের পর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট পূরবী মজুমদার ও মনিন্দ্রনাথের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এসে তারা এ প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হন।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা আড়াল করতে মারামারির মামলা নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ ঘটনায় প্রশাসনকে জবাব দিতে হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতারা।
এর আগে এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা মহিলা পরিষদের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংগঠনের নারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া সংবাদ সম্মেলন করে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
উল্লেখ্য, আশ্রয়দাতা সেজে কটিয়াদি উপজেলার বনগ্রামে বাড়িতে আটকে রেখে পাল সম্প্রদায়ের বিধবা নারী ও তার কিশোরী কন্যাকে ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের কর্তা ব্যবসায়ী ধনু মিয়া ও তার ভাই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছেলু মিয়া ওই বিধবা গৃহপরিচারিকার ওপর পাশবিক নির্যাতন করে। এছাড়া ধনু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন মিয়া ওই বিধবার কিশোরী কন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
খবর পেয়ে গত ১৫ জুন শুক্রবার রাত ২টার দিকে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে জখম নিয়ে হাসপাতালে শয্যায় ওই যন্ত্রণাকাতর বিধবা নারীর আহাজারির ঘটনা যমুনা টিভির ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
ঘটনার পাঁচ দিন পরও এ ঘটনায় পুলিশ মামলা নিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভিতে সংবাদ প্রচারের পর র‌্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি দল বুধবার রাত ১০টার দিকে কটিয়াদী থানার সামনে থেকে যুবলীগ নেতা সুমনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের প্রয়োগ না করে তড়িঘড়ি করে এ ঘটনাটিকে মারামারির মামলা হিসেবে এফআইআর করে সুমনকে কোর্টে সোপর্দ করে পুলিশ।
জামিনযোগ্য অপরাধ দেখানোর কারণে পরের দিনই জামিনে মুক্তি পায় যুবলীগ নেতা সুমন। তবে এ সময় বাদীপক্ষ আদালতে যমুনা টিভিতে প্রচারিত সংবাদ প্রদর্শনের পর প্রতিদিন হাজিরা প্রদানের শর্তে আদালত এ জামিন মঞ্জুর করেন।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

 
Top