নেত্রকোনায় শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন মামলায় এক স্কুলশিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার
দুপুরে শহরের নাগড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই শিক্ষিকার নাম ফারজানা আক্তার (৩২)। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
নির্যাতনের শিকার ওই শিশু গৃহকর্মীর নাম রোকেয়া আক্তার (১২)। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। রোকেয়া সদর উপজেলার চল্লিশা রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়ার মেয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৮–১০ মাস ধরে রোকেয়া আক্তার শিক্ষিকা ফারজানা আক্তারের বাসায় কাজ করে আসছিল। কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নানা অজুহাতে তার ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একাধিকবার মেয়েটি কাজ ফেলে চলে যেতে চায়। এতে ওই শিক্ষিকা তাঁকে হত্যার হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতেন। এভাবে দিনের পর দিন সে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে চলছিল। সম্প্রতি তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার
কাজ করার সময় পানি ফেলে দেওয়ার কারণে রোকেয়াকে প্রথমে রুটি তৈরির বেলন দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন তিনি। একপর্যায়ে গরম লোহার শিক দিয়ে পিঠে ও শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ছ্যাঁকা দেন। বিষয়টি স্থানীয় এক বাসিন্দা নেত্রকোনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মাদ ফখরুজ্জামান জুয়েলকে জানান। পরে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে নির্যাতনকারী
ওই স্কুলশিক্ষিকাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এদিকে খবর পেয়ে শিশুটির বাবা বাচ্চু মিয়া মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন।
হাসপাতালে বাচ্চু মিয়া সাংবাদিকদের
বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমার মেয়েটি একটু শান্তিতে থাকার জন্য ওই শিক্ষিকার বাসায় কাজ করতে দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই শিক্ষিকা আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছেন। আমি তাঁর দৃষ্টান্তমূলক
শাস্তি চাই।’
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরির বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মল্লিকা কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটির মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোলা এবং জখম রয়েছে। পিঠে ও স্পর্শকাতর স্থানে লোহার ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে সারতে কিছুটা সময় লাগবে।’
পুলিশ হেফাজতে থাকায় এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফারজানা আক্তারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নেত্রকোনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুজ্জামান
জুয়েল বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশুটির ওপর ওই শিক্ষিকা অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছেন। শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা বাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় ফারজানা আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বিকেলে তাঁকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল।
সূত্রঃ প্রথমআলো