ইয়াবা
ব্যবসায়ীদের যেমন বড় বড় চক্র থাকে, তেমন কিছুই নেই রুপা ইসলামের। তিন-চারজনের ছোট একটি দল। সেই
ছোট দলটিই গত এক বছরে বিক্রি করেছে এক কোটি টাকার ইয়াবা। ভয়ংকর
মাদক ইয়াবার এই চালান রুপার কাছে আসত টেকনাফ থেকে। সেই
চালান চলে যেত মাদকসেবীদের হাতে।
পোশাককর্মী
হিসেবে ঢাকায় জীবন শুরু করলেও একপর্যায়ে গুলশান-বনানীর কিছু উচ্চবিত্ত তরুণ-তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় রুপার। তাঁদের
সঙ্গে ডান্স পার্টিতে (নাচের আসর) অংশ নিতেন, কয়েকবার র্যাম্পেও হেঁটেছেন। সব
সময় লক্ষ্য ছিল যেকোনোভাবে ইয়াবা বিক্রি করা। এভাবে
শতাধিক তরুণ-তরুণীকে ক্রেতা বানিয়ে নেন।
রুপা
এখন কারাগারে। গত
বছরের ১৭ অক্টোবর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। কক্সবাজারের
এক ইয়াবা বিক্রেতার মামলা তদন্ত করতে গিয়ে রুপা ও তাঁর দলের সন্ধান পায় সিআইডি পুলিশ।
আদালতে
দেওয়া পুলিশ প্রতিবেদনে সিআইডি বলেছে, কক্সবাজারের টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী নূরুল হক ওরফে ভুট্টো ও নূরুল আলমের সঙ্গে রুপা ইসলামের যোগাযোগ ছিল। রুপার
সঙ্গে ধরা পড়েছেন তাঁর স্বামী আল আমিন, সহযোগী ফয়সল হোসেন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দুই এজেন্ট আবদুল কুদ্দুস ও আবদুর রহিম।
সিআইডির
বিশেষ সুপার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গুলশান-বনানীতে যত মাদক কেনাবেচা হয়, তার একটি অংশ আসত রুপার কাছ থেকে। রুপার
মতো আরও কয়েকজন বিক্রেতা আছে।
সিআইডির
সহকারী পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, কক্সবাজারে গ্রেপ্তার ইয়াবা ব্যবসায়ী নূরুল হকের ডায়েরিতে রুপার সঙ্গে লেনদেনের তথ্য ছিল। সেই
সূত্রে তাঁরা রুপার ব্যাপারে খোঁজ করে জানতে পারেন, তিনি আগেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এরপর
রুপাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের
জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াবা কেনাবেচার কথা স্বীকার করেন রুপা। তিনি
জানান, পল্লবীর জনি টেলিকমের মালিক আবদুর রহিম ওরফে জনি ও সেনপাড়া পর্বতার মরিয়ম টেলিকমের মালিক আবদুল কুদ্দুসের মাধ্যমে টেকনাফে নূরুল হকের কাছে টাকা পাঠাতেন তিনি। তাঁরা
দুজনেই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট। টাকা
পাঠানোর পর টেকনাফ থেকে বিভিন্ন যানবাহনে তাঁদের ইয়াবা চলে আসত ঢাকায়। এই
চক্রের ৬৬ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ হাতে পেয়েছে সিআইডি। আরও
কিছু লেনদেনের হিসাব-নিকাশ চলছে। এই
তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সহায়তা করেছে।
ফয়সল
আহমেদ ও আবদুল কুদ্দুস ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে
তাঁরা ইয়াবা-বাণিজ্যের কথা স্বীকার করেন।
রুপার
ব্যাপারে খোঁজ করতে তাঁর সেনপাড়া পর্বতার বাসায় গেলে কেউ কথা বলতে চাননি। রুপার
বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি জানান, তাঁর পরিবারের কেউ বাসায় নেই। বাসাটি
তালা দেওয়া। রুপা
কারাগারে যাওয়ার পর একমাত্র মেয়েকে আত্মীয়স্বজন নিয়ে গেছেন। তবে
ওই ব্যক্তি জানান, রুপাকে এলাকার লোকজন আনজু নামেই চিনতেন। মাদক
ক্রেতারাও রুপাকে ‘আনজু ভাবি’ নামে চেনেন বলে সিআইডির কর্মকর্তারা জানান।
খোঁজ
নিয়ে জানা যায়, রুপা ইসলামের আদি নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার ছলিমাবাদ গ্রামে। বাবা
আবদুল বাতেন দরিদ্র কৃষক। জীবিকার
তাগিদে ঢাকায় এসে তৈরি পোশাক কারাখানায় চাকরি নেন রুপা। সেখানে
পরিচয় হয় মাদক ব্যবসায়ী আল আমিনের সঙ্গে। এরপর
দুজনে বিয়ে করেন। স্বামীর
হাত ধরে মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন রুপা। একপর্যায়ে
ইয়াবা কারবারের হাল ধরেন তিনি। বড়
বড় হোটেলে নাচের আসরে অংশ নেওয়ার সুবাদে বিত্তশালী পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন তিনি। এরপর
তাঁদের ইয়াবা সেবনে প্রলুব্ধ করেন। এভাবে
ইয়াবার ক্রেতা তৈরি করেন রুপা। এসব
ক্রেতা রুপার কাছ থেকে নিয়মিত ইয়াবা কিনতেন। রুপার
সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সখ্যের কথা বলেছেন সিআইডি কর্মকর্তারা। তবে
কাদের সঙ্গে সে সখ্য, তা তাঁরা বলতে চাননি।