নতুন বাস্তবতায় অর্থনৈতিকভাবে আরও স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে নতুন এক শিল্পের দিকে ঝুঁকছে দেশ। তা হচ্ছে মোবাইল অ্যাপস। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সম্ভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে শিল্পটি। বাংলার তরুণরা ঝুঁকছে অ্যাপস নির্মাণের প্রতি। নিয়ে কথা হয় ক্লাউড ক্যাম্প বাংলাদেশের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ জামানের সঙ্গে। তিনি জানান নানা আশার কথা। অ্যাপস বা অ্যাপ্লিকেশন্স : স্মার্টফোনে ন্যূনতম তিন ক্লিকে নানা ধরনের তথ্যসেবা পেতে যে সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়, তাকেই অ্যাপস বা অ্যাপ্লিকেশন্স বলে। সরকারি-বেসরকারি নানা সেবা, তথ্যের জন্য এসব অ্যাপসগুলো শুরুতে হ্যান্ডসেট কোম্পানিগুলোই তৈরি করে স্মার্টফোনের সঙ্গে জুড়ে দিত। এখন যে কোনো ডেভেলপার ক্লাউডের অ্যাপস স্টোরে নিজের তৈরি অ্যাপস জমা রাখতে ব্যবহারকারী বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন।

শিল্প যখন অ্যাপস নির্মাণঅ্যাপস নির্মাণ আমাদের জন্য এক নতুন শিল্প। এর বিকাশে বাংলাদেশ সরকার বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছে, পরিবেশ তৈরি করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে নেয়া হয়েছে বহু পদক্ষেপ। তাই শিল্প তৈরি পোশাকের থেকেও বড় শিল্প হয়ে উঠতে পারে এখানে। আর যারা অ্যাপ বানাবে তারা স্মার্ট, জ্ঞানী, শিক্ষিত। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড হবে অ্যাপস নির্মাতা লাখো তরুণের দেশ হিসেবে।

সম্ভাবনা যখন অপার
বিশ্ববাজারের চাহিদার কথা বাদ দিলেও আমাদের নিজস্ব চাহিদা অনেক। এখানে ১১ কোটি সিমকার্ড ব্যবহার করে থেকে কোটি মানুষ। এর ১০ শতাংশ যদি অ্যানড্রয়েড হয়, তাহলে বিশাল গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে দরকার প্রচুর অ্যাপস। অ্যানড্রয়ডের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাড়বে। আমরা যদি অ্যাপগুলো বানাতে পারি বাংলায়, করতে পারি জেশ্চারনির্ভর, তাহলে ইশারায়, ছবির মাধ্যমে, কথা বলে, শব্দ শুনেও সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে শুধু ডেভেলপার দিয়ে কাজ শেষ হবে না। একদল লোক স্বপ্ন দেখবে, একদল উদ্যোগ নেবে, একদল বিনিয়োগ করবে এবং প্রযুক্তিবিদরা নির্মাণ করবে। এভাবে যৌথভাবে এগোতে হবে। অর্থায়নেরও নানা কলাকৌশল রয়েছে যেগুলো বেশ সহজেই করা সম্ভব। এছাড়া সক্ষমতা তৈরির জন্যও রয়েছে বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থা।

পথ দেখাবে ক্লাউড ক্যাম্প বাংলাদেশ
নতুন টেকনোলজির সঙ্গে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয় ক্লাউড ক্যাম্প। বাংলাদেশে আপাতত আমাদের প্রধান কাজ মোবাইল অ্যাপস নির্মাণে সহায়তা করা। এটা করা হচ্ছে তিন ভাবেÑ আইডিয়া বা চাহিদা অনুসারে অ্যাপস তৈরিতে সহায়তা, ট্রেনিং করানো দক্ষ করে তোলা। ক্লাউড ক্যাম্পের কর্মবিন্দু হচ্ছেস্কিল ফোরামবা দক্ষতায়ন। বিশ্বের সেরা প্রশিক্ষকদের দ্বারা দক্ষতার শূন্য জায়গাগুলো পূরণের মাধ্যমে কাজ করা। প্রশিক্ষণ হতে পারে মুখোমুখি ক্লাসে, রেকর্ড করা ভিডিও, ইউটিউব বা ইন্টারনেটে রাখা টিউটোরিয়াল কিংবা সরাসরি চ্যাটের মাধ্যমে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাউড ক্যাম্পের শাখা থাকবে, যারা ক্যাম্পিং চালিয়ে যাবে।

মেধাই যেখানে মূল সম্পদ
আমাদের তরুণরা অনেক মেধাবী। তাদের শিক্ষা মেধা তাদের সাফল্য এনে দেবে। বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী তরুণরা যখন কোনো কাজে মনোনিবেশ করবে তখন তাদের সাফল্য আসবেই। আমরা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, তাদের শুধু পথ দেখিয়ে দিচ্ছি, যন্ত্র তার ব্যবহার শেখাচ্ছি। তাদের এগিয়ে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

রোজগার হবে ডলারে
দেশ-বিদেশের গ্রাহকরা যদি অ্যাপস ডাউনলোড করে ব্যবহার করে তাহলে রোজগার হতে পারে দুভাবে। এক, বিনামূল্যের অ্যাপসে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে, দুই অর্থের বিনিময়ে ডাউনলোডের মাধ্যমে। লাখ লাখ বার ডাউনলোড হলে লাখ লাখ ডলার রোজগার করা যায়।

নেপথ্যের হাতগুলো
ক্লাউড ক্যাম্পের বাংলাদেশের সমন্বয়ক ক্লাউড ক্যাম্প বাংলাদেশ কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দিচ্ছে। এছাড়া বিরাট কর্মযজ্ঞের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), গুগল ডেভেলপার গ্রুপ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), ব্র্যাক, ড্যাফোডিল, ইস্টওয়েস্ট, আহ্্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাবসহ আরও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এছাড়া গ্রামীণ সলুশন, মোবিঅ্যাপসহ বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানি। ক্লাউড ক্যাম্প প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী নয়, বরং প্রশিক্ষক তৈরি করছে। কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই আবার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অন্যদের। এখন শিক্ষার্থীকে শেখানোর সময় নয়। আমাদের লক্ষ্য ১০ লাখ প্রশিক্ষক তৈরি করা, যারা প্রশিক্ষণও দেবে, অ্যাপসও তৈরি করবে। এটি হবে দেশের এক বিরাট শিল্প। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের ১০ লাখ তরুণ অ্যাপস তৈরি করবে, এটা একটা স্বপ্নের মতো। আমাদের তরুণরা অনেক মেধাবী। অনেক পথ থেকে আমরা তাদের পথ বাতলে দিচ্ছি, প্রশিক্ষণ আর যন্ত্র দিচ্ছি। তারা তাদের মেধা-শ্রম দিয়ে এগিয়ে যাবে। বেশির ভাগ অ্যাপস উন্নয়নী প্রশিক্ষণ তাই বিনামূল্যেই দেয়া হচ্ছে।

সফল প্রশিক্ষণ জোগাবে এগোবার সাহস
ইএশিয়া থেকে শুরু করে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আমাদের প্রশিক্ষকরা দেশে এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এছাড়া বুট ক্যাম্প, ক্লাউড বুট ক্যাম্প, প্রতি মাসে চাহিদামাফিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তো করছেই। প্রতি মাসেই ওয়েব অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে -মেইলে এবং ওয়েবের মাধ্যমে দুচার জন প্রশিক্ষক এসব ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশিক্ষণ কাদের জন্য
বেসিক কম্পিউটার ইংরেজি জ্ঞান আছে রকম যে কেউ অ্যাপস উন্নয়নী প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তবে যে কোনো বিষয়ে স্নাতক হলে তার জন্য কাজটি একটু সহজ আর কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকদের জন্য আরও সহজ হয়ে যায়। বর্তমানে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে তাদের ৭০-৮০ শতাংশই কম্পিউটার বিজ্ঞানের চলমান শিক্ষার্থী। বাকিদের মধ্যে কেউ কম্পিউটার বিজ্ঞানে পাস করে গেছে, নয় তো উদ্যোক্তা।  - রাসেল মাহ্মুদ ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
 
Top