বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে শিশু মাতৃ মৃত্যুহার কমেছেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো' 'স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস' জরিপ অনুযায়ী ২০১৬' তুলনায় ২০১৭'তে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় চার মাস২০১৬'তে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৭১. বছর, ২০১৭ তে তা বেড়ে দাড়ায় প্রায় ৭২ বছরেপুরুষদের গড় আয়ু ৭০. থেকে উন্নীত হয়েছে ৭০. বছরে আর নারীদের গড় আয়ু ৭২. থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩. বছরকোন বিষয়গুলোর কারণে বাংলাদেশের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিনুল হকের মতে, গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয় অবদান রেখেছে
. শিশু মৃত্যুহার হ্রাস:
মি.হক বলছেন, গড় আয়ু বাড়ার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস
বিবিএস'এর জরিপ অনুযায়ী, ২০০১ সালে যেখানে বাংলাদেশে নবজাতক মৃত্যুর হার ছিল প্রতি ১০০০ জন জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে ৫৬ জন, ২০১৭'তে এসে তা কমে দাড়ায় ২৪ জনে
পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ২০০১ ছিল ৮২ জন, যা ২০১৭'তে কমে দাড়ায় ৩১ জনে
গড়ে প্রতি হাজার জন্মে শিশু মৃত্যুহার ২০০১ এর . থেকে ২০১৭'তে কমেছে .
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের উন্নতি শিশু মৃত্যুহার কমানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন মি. হক
. মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস:

মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়াও গড় আয়ু বাড়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ
১৯৮৬ সালে প্রতি হাজার জন্ম নেয়া শিশুর ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু হার ছিল .৪৮ ২০১৭ তে সেই সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে .৭২ তে
. শিক্ষার হার বৃদ্ধি:
শিক্ষার হারও গড় আয়ুকে প্রভাবিত করে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে সাধারণত মানুষ নিজের স্বাস্থ্য নিরপাত্তার বিষয়ে বেশী সচেতন হয়ে থাকে
জরিপ অনুযায়ী, বছর বা তার চেয়ে বেশী বয়সের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার হার ২০১৭'তে ছিল ৭২.%, যা একযুগ আগে ২০০৫ ছিল ৫২.% অর্থাৎ প্রায় ১৩ বছরে শিক্ষার হার বেড়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ
১৫ বছর তার চেয়ে বেশী বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে শিক্ষার হার ২০০৫ ছিল ৫৩.% এবং ২০১৭'তে তা বেড়ে দাড়ায় ৭২. শতাংশে
আপনার সম্ভাব্য গড় আয়ু জানতে এখানে ক্লিক করুন
. অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি:
অর্থনৈতিক উন্নয়ন গড় আয়ুকে প্রভাবিত করে মি.আমিনুল হক বলেন, "একটি পরিবার যখন দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে আসে, তখন তারা বেশী পুষ্টিকর খাবার হয় এবং স্বাস্থ্যের দিকে বেশী নজর দেয়"
মি. হক বলেন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের সাথে সাথে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, যা মানুষকে দীর্ঘকাল সুস্থ জীবনযাপনে সহায়তা করে
গত ১৩ বছরে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার হিসেবে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে বাংলাদেশ
২০০৫ সালে বাংলাদেশে ১৯. শতাংশ পরিবার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হিসেবে বিবেচিত হতো ২০১৭ সালে ৩৯ শতাংশের বেশী পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়
গত কয়েকদশকে বাংলাদেশে দরিদ্র অতিদরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত মানুষের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে
. ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়া:
মি. আমিনুল হকের মতে স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে ছোঁয়াচে রোগের সংখ্যা কমেছে যা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে গড় আয়ুতে
মি. হক বলেন, "পরিবেশ দূষণের কারণে মানুষের মধ্যে দুষণজনিত নানাধরণের অসুখ দেখা দিচ্ছে তবে সেসব রোগ দীর্ঘকালীন সমস্যা তৈরী করে বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যার ফলে গড় আয়ু বেড়েছে"
এছাড়া চিকিৎসাখাতে উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের মাঝে চিকিৎসা নিতে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা নিতে যাবার প্রবণতা অনেক বেড়েছে
. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি:

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর মৃত্যুসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও গড় আয়ু কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছ, এই প্রশ্নের জবাবে মি. হক বলেন নতুন শিশু জন্মহারের তুলনায় আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা নগণ্য তাই আকস্মিক মৃত্যুর কারণে গড় আয়ু হ্রাস পেলেও অন্যদিকে শিশু জন্মহার অপরিবর্তিত থাকায় মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় তা গড় আয়ুর ওপর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে না
এছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়ও উন্নয়ন হয়েছে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাসে একসময় ব্যাপক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও যোগাযোগ প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নয়নের সাথে সাথে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছেএছাড়া ঘরের বাইরের কাজে নারীদের সম্পৃক্ততা বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়াকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা যার ফলে সরাসরি প্রভাবিত হয়েছে গড় আয়ু

 
Top