সে ১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন কিংবা নিগৃহের হিসাব করা যাবেনা, তবে এককথা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সবসময় নির্যাতিত কখনো হয়ত নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে আবার কখনো কমেছে
১৯৭১-১৯৭৫ঃ বাংলাদেশের জন্মলগ্নে অর্থাৎ ১৯৭১ সাল থেকে যদি বাংলাদেশের নিজস্ব ইতিহাস বলে দাবী করে তবে সেই ১৯৭১ সাল থেকেই হিন্দুদেরর উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে টার্গেট করে জাতিগত নির্মূলীকরণ এর খেলায় নেমেছিল পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের পোষা বাংলাদেশী দোসর আলবদর, রাজাকার আর আল শামস নামক বাহিনীতাদের অত্যাচার নির্যাতন ধর্ষণ গুলো প্রধানত ছিল বেছে বেছে বাংলাদেশের হিন্দু এলাকা গুলোতেএর প্রমান সে দেশে যে মানবতাবিরধি অপরাধে দণ্ডিত পাকিস্তানি দোসরদের বিচার চলছে সে গুলোর দিকে তাকালেই বুঝব
১৯৭১ সালের পূর্বেও পাকিস্তানি সরকার হিন্দুদের অত্যাচার করেছে তবে তা সম্ভবত বাংলাদেশ নামক দেশ সৃষ্টি হবার যে মাত্রা পেয়েছে তাকে অতিক্রম করতে পারেনিপাক ভারত যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ তুলতে পাকি জান্তারা বাংলাদেশের হিন্দু দের সম্পত্তি কে শত্রু সম্পত্তি বলে ঘোষণা করেএভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ সংখ্যালঘু হিন্দুদের উত্তরাধিকারের বঞ্চিত হয় তবে এই কথা সত্যি ১৯৭১ সালে হিন্দু মুসলমান সবাই আক্রান্ত হয়েছিল তবে মুসলমান হলে কখনও কখনও হয়েতো বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু হিন্দু হলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে কেউ কখনও প্রাণে বেঁচে ফিরে আসেনি। 
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রথমে আক্রমন করত হিন্দু অধ্যষুত এলাকাতেপুরুষদের লুঙ্গী খুলে লিঙ্গ চেক করত; খাতনা করা থাকলে মুসলমান বলে কিছুটা রক্ষাদিত আর খাতনা না থাকলে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করতকখনো কখনো কালেমা পড়িয়ে পরিক্ষা নিত; তৎকালীন সময়ে অনেক সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় কলেমা শিখতে বাধ্য হয়েছে তাদের জীনর রক্ষাত্রে; প্রশ্ন হল জীবন কি বেঁচছিল?এই সোজা উত্তর হচ্ছেনাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান হিন্দু গরিষ্ঠ রাষ্ট্র ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্যে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করা এবং পাকি কারাগার থেকে নিজের নিশ্চিত মৃত্যু থেকে পরিত্রান পাওয়া স্বত্বেও স্বাধীন বাংলাদেশের শত্রু সম্পত্তি নামক আইনটি নিষিদ্ধ না করে তার নামঅর্পিত সম্পত্তিদিয়ে হিন্দুদের সহায় সম্পদ 
বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল;মুজিব সরকার ইহা ইচ্ছেকরে করেছে বলে মনে হয়না; হইত উগ্রবাদীদের চাপে তিনি নতি স্বীকার করেছিলেন
১৯৭৫-১৯৯০ঃ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা সবাই পাকিস্তানি প্রেতাত্নাতারা সদ্য স্বাধীন দেশে মুলনীতি পাল্টে দিল; বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের চার মূলনীতি মুচে দিয়ে পাকিস্তানী ভাবধারায় রাস্ট্র পরিচালনা করতে লাগল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্যছিল একটি স্যাকুলার রাষ্ট্র কায়েম
যেখানে সব ধর্মের মানুষের জন্য সমধিকার থাকবে যার যার ধর্ম সে সে শান্তিমত পালন করবেকিন্তু খুনিচক্র এখানে ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করলকেউ সংবিধানে বিসমিল্লাহ্যোগ করল বাংলাদেশের নাম করন করল ইসলামি রিপাব্লিক বাংলাদেশ!। 
আর কেউ যোগ করল রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম,রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য কলংক, যা পুরুপুরি অযৌক্তিক অপ্রয়োজনীয় ছিল; বোকা ধার্মিকদের আর ধর্মভিরুদের খুশি করে ক্ষমতা টিকেয়ে রাখতে তারা এটা করেছিলতৎকালীন শাসন আমলেও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে ব্যপক হারে
১৯৯১-১৯৯৬ঃ দীর্ঘ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯১ সালের সাধারন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসল বিএনপি,নির্বাচনের পর থেকে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন শুরুহলতাদের অপরাধ ছিল তারা আওয়ামিলীগ তথা নৌকায় ভোট দিয়েছে,অনেক কে হত্যাকরা করা হল তাদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হলকোনকোন জাইগায় ধর্ষন করা হল সংখ্যালঘু তরুণীদের। 
যার প্রত্যেকটি ঘটনায় যুক্ত ছিল বিএনপির ক্যাডারেরা নির্যাতন ভয়ে অনেকে দেশত্যাগে বাধ্যহল ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গাকে কেন্দ্রকরে বাংলাদেশেও নিরাপরাধ সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হয়েছে,মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তাদের বাড়িঘরে

১৯৯৬-২০০০ঃ ১৯৯৬ সালের সাধারন নির্বাচনে আওয়ামিলীগ ক্ষমতা আসারপর কিছটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পেলেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়এই বছর সংখ্যালঘু নির্যাতনের বড়কোন আলামত পাওয়া যায়নি জায়গা জমি সংক্রান্ত দুইএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া
২০০১-২০০৬ঃ স্বাধীনতার পর বাংলাদশে সংখ্যালঘুদের উপর সবচে বেশি নির্যাতন হয়েছে এই পাঁচ বছর। 
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জমাত জোট তথা চারদলীয় জোট২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ১৯৭১ সালের বর্বর দিনগুলোর স্মৃতি যজ্ঞে২০০১ সালের অক্টোবরের তারিখ কতিপয় স্থানে সংখ্যালঘুদের হুমকি নির্যাতনের ঘটনা বাদে শান্তিপূর্ণই ছিল দিনটি কিন্তু সকালের সূর্য্যে সেদিন প্রতিধ্বনিত হয়নি অন্ধকারের জীবেরা বাকিটা সময়ের জন্যে কি ভয়াবহ ভীবৎস চেহারা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে সেদিনের নির্বাচনে শতকরা ৪১ ভাগ ভোট পেয়েও মাত্র ৫৬ টি আসন নিয়ে বিরোধি দলের আসনে বসে আওয়ামীলীগ আর যেন যুদ্ধজয়ী রুপ নিযে নির্বাচনে পরাজিতের বিপক্ষে ঝাপিয়ে পড়েছিল বিজয়ী চারদলীয় জোট ২০০১ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতন অনেক ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালকেও হার মানিয়েছিল
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়েপাকসার জমিন সাদবাদনামক একটি বই লিখেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ হুমায়ুন আজাদ যার জন্য তাকেও জীবন দিতে হয়েছিল জংগীগোস্টির হাতেতবে শত বছর ধরে মনে রাখার মতো পুর্ণিমা ধর্ষনের খবর জেনেছে, শুনেছে আতংকিত মায়ের উক্তিবাবারা আমার মেয়েটা ছোট, তোমরা একজন একজন করে যেও”, দেখেছে শুধুমাত্র বিরুদ্ধ রাজনৈতিক দল করার কারনে নগর থেকে শান্ত গ্রাম অবধি লাশের মিছিল

সংখ্যালঘু নির্যাতনের সবচেয়ে ভয়াবহ রোমহর্ষক ঘটনাগুলো ঘটে বরিশালের গৌরনদী আগৈলঝাড়া উপজেলায় সেই দুঃসহ নির্যাতনের ঘটনার কথা স্মরণ করে এখনও চমকে ওঠেন ওই অঞ্চলের সংখ্যালঘুরা দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার ওই বছরের ডিসেম্বরের সংখ্যার রিপোর্টে বলা হয়, ডিসেম্বর রাতে টরকী বন্দরের বার্ষিক কীর্তন শুনে বাড়ি ফেরার পথে আগৈলঝাড়ার বারপাইকা গ্রামের দিনমজুর জগদীশ বৈরাগীর পত্নী সুনিত্রী বৈরাগী (২৫)কে কাঞ্চন বেপারী ফিরোজ শিকদারের নেতৃত্বে একদল দৃর্বত্ত গণধর্ষণ করে পরদিন ডিসেম্বর রাতে বিএনপি ক্যাডার রফিক চোকদার সংখ্যালঘু পলিন চন্দ্র বাড়ৈয়ের সম্মুখে তার কন্যা শোভা (১৪) কে ধর্ষণ চেষ্টা চালায় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ক্যাবল ব্যবসায়ী বলাই কুন্ডুর বাড়িত দুর্বত্তরা ডিসেম্বর অগ্নিসংযোগ করে ২০০১ সালের অক্টোবরের রাত থেকে বিএনপি ক্যাডাররা ভোলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে গণলুট নির্যাতন চালায় ওই রাতের তান্ডবে ২৮৭টি সংখ্যালঘু পরিবার নির্যাতনের শিকার হয় ২১ জন নারী লাঞ্ছনার শিকার হয়
ইংরেজি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক খবর অনুযায়ী, ভোলার লালমোহন উপজেলায় প্রায় এক হাজার নরনারী ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয় (ডেইলি স্টার, এপ্রিল ১৭) বিএসএস সংবাদদাতার কাছে দেয়া বিবৃতিতে নির্যাতিতদের মধ্যে অনেকেই জানান, কীভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির স্থানীয় নেতা এবং ক্যাডাররা তাদের নানাভাবে নির্যাতন করে তারা অনেক হত্যার ঘটনাও উল্লেখ করেন অভিযোগকারীরা সরকারের কাছে বিচারের জন্য আবেদন জানান
সরকার অধ্যবদি পর্যন্ত এই নির্যাতনের বিচার করতে পারেনি

২০০৭-২০০১৬ঃ মইনুদ্দীন ফখরুদ্দীন সরকারের সময় সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়নি.২০০৯ আওয়ামিলীগ ক্ষমতাই আসলে সংখ্যালঘুরা শান্তিতে ছিলকিন্ত ২০১৪ সালের - জানুয়ারীর নির্বাচনের পর আবার নতুন করে আক্রান্ত হল বাংলা সংখ্যালঘুরাবিএনপি-জমাত জোট নির্বাচন বর্জন করে অনেকটা ভোটার বিহীন নির্বাচনে কিছুকিছু জায়গাই স্বতর্ফুত ভাবে সংখ্যালঘুদের ভোটদিতে দেখা যায় আর এহাই ছিল তাদের অপরাধএই অপরাধে অগ্নিসংযোগ লুটপাট করা হয় তাদের বাড়িঘর!
তবে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক কালে আবার সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে যার সাথে জড়িত সরকারী দলের নেতাকর্মীরা এটি ভয়াবহ ইংগিত যা মানতে পারিনা কিছুকিছু জায়গাই জমি সংক্রান্ত মামলা নিয়ে সংখ্যালঘুদের সাথে সরকার দলীয় নেতাদের সাথে দুরুত্ব বেড়েছে,প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে দেশের ভিবিন্ন জায়গায়হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি জোড় করে দখল করে নিয়েছে স্থানিয় চেয়ারম্যান আর সরকার দলীয় ক্যাডারেরাআমরা চায় এসব ঘটনার তদন্ত্র করে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করা হোক
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির দেশ; এদেশে একজন মুসলমানের যে অধিকার থাকবে একজন হিন্দু একজন খ্রিষ্ট্রান একজন বৌদ্ধের একই আধিকার থাকবেরাষ্ট্র এখানে ডমিনেট করবে ধর্ম নয়ধর্ম ব্যক্তির রাস্ট্রের নয়
সুতরাং সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব কর্তব্য

লিখেছেনরুদ্র রক্তিম 

 
Top