খুলনা
মহানগর পুলিশ (কেএমপি) ও জেলা পুলিশের ৩৪ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের
তদন্ত চলছে। মাদক চোরাকারবার ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তাকারী হিসেবে গোয়েন্দা
সংস্থার তালিকায় জেলার ১২ জন এবং মহানগরের ২২ জন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। এদের মধ্যে
২ জন ওসি ছাড়াও এসআই ২১ জন, এএসআই ৯ জন এবং ২ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
নগর
ও জেলা পুলিশের একাধিক টিম ৩৪ সদস্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের কাজ
করছে। এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য
সূত্র জানিয়েছে, তদন্তে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেই চাকরিচ্যুতিসহ জেলহাজতে
পাঠানোর মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুব দ্রুতই তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
বিষয়টি
জানাজানি হওয়ার পর অভিযুক্ত অনেক পুলিশ সদস্য গোয়েন্দা সংস্থার ওই তালিকা থেকে নিজেদের
নাম সরানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনেকেই পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছে নিজের
ভালো কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন।
এ
ছাড়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমেও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে সুপারিশ করাসহ তদন্ত
রিপোর্ট পক্ষে নেয়ার জন্য কালো টাকা ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা
রিপোর্ট অনুযায়ী, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তরা হলেন- জেলার দিঘলিয়া থানার ওসি
হাবিবুর রহমান, ফুলতলা থানার ওসি আসাদুজ্জামান, রূপসা থানার আইচগাতি ফাঁড়ি ইনচার্জ
এসআই জাহিদ, রূপসা থানার এএসআই রবিউল ইসলাম, দাকোপ থানার এএসআই সবুর হোসেন, পাইকগাছা
থানার এসআই মমিন, কয়রা থানার এসআই ইকবাল ও এসআই আজম, ডুমুরিয়া থানার মাগুরঘোনা ক্যাম্প
ইনচার্জ এসআই নাহিদ হাসান ও এএসআই রবিউল, বটিয়াঘাটা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম ও দিঘলিয়া
থানার এসআই মধুসূদন।
কেএমপির
মধ্যে রয়েছেন খানজাহান আলী থানার এসআই রাজ্জাক, এসআই ইলিয়াস, এসআই সুমঙ্গল, শিরোমণি
পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো. শহীদুল ইসলাম, একই থানার আটরা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল মো.
মিজান, দৌলতপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. মিকাইল হোসেন, একই থানার মহেশ্বরপাশা ফাঁড়ির
এএসআই মো. মেহেদী হাসান, খালিশপুর থানার এসআই কানাই লাল মজুমদার, এসআই নুরু, সদর থানার
এসআই শাহ আলম, এসআই টিপু সুলতান, এসআই মিলন কুমার, এসআই শুব্রত কুমার বাড়ৈ, এসআই আশরাফুল
আলম, সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সোবহান, এএসআই এমদাদুল হক, এএসআই নুরুজ্জামান, লবণচরা থানার
এসআই বাবুল ইসলাম, লবণচরা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো. ওসমান গনি, এএসআই আবদুল্লাহ আল মামুন,
এএসআই মনজিল হাসান, হরিণটানা থানার এএসআই মোহাম্মদ রিপন মোল্লা।
এ
বিষয়ে দিঘলিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি দিঘলিয়া থানায় যোগদানের পর মামলার
পরিমাণ বেড়েছে। অনেকের মাদক বিক্রিতে সমস্যা হয়েছে। আমি পুরোপুরি পরিস্থিতির শিকার।’
ফুলতলা থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাদক বিকিকিনি আমার এলাকায় নেই বললেই চলে। তবে
কীভাবে আমার নাম এ তালিকায় এসেছে তা জানি না। তবে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’ দুই ওসিসহ
একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে নাম কাটানোর বিষয়ে তদবির করা হচ্ছে কিনা জানতে
চাইলে তারা এ বিষয়ে কেউই কথা বলতে চাননি।
কেএমপির
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন যুগান্তরকে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরই অধিকাংশ
পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।
২২
জন পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) ও উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর)
তদন্ত করছেন। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদক সেবনের প্রমাণ মিললে চাকরিচ্যুতি
এবং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে চাকরিচ্যুতিসহ জেল খাটতে হবে।
খুলনা
জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ যে কারোর বিরুদ্ধেই হতে
পারে। তদন্ত ও প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে
৩ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। প্রমাণসাপেক্ষে চাকরিচ্যুতি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা
নেয়া হতে পারে।’
সূত্র:
দৈনিক যুগান্তর