হাল ছাড়ার পাত্র নন কেউই। যেমন দিলি্লর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তেমনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি।
প্রথমজন হাল না ছেড়ে গত বেশ কিছুদিন ধরেই মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একের পর এক গোলা ছুড়ছেন। আর তারই জবাব দিতে গিয়ে সোমবার মোদি শিবির যে তথ্যপ্রমাণ সামনে আনল, তাতে বোঝা গেল তিনি মোটেও হাল ছাড়ার বান্দা নন এবং এ অভ্যাস তার দীর্ঘদিনের।
গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় আগেই জানিয়েছিল, ‘এক্সটারনাল’ ছাত্র হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর স্তরে ৬২.৩ শতাংশ নাম্বার পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার মোদির স্নাতক স্তরের ডিগ্রি প্রকাশ্যে আনল বিজেপি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একবার নয়, দু’বার নয়, তিনবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোদি। এবং হাল না ছাড়ার কারণেই শেষে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। যদিও কেজরিওয়াল শিবির এরপরও দাবি করেছে, বিজেপির এ দিনের পেশ করা মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটও ভুয়া।
কেজরিওয়ালের গোলা সামলাতে এদিন দিলি্লতে বিজেপির তরফে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত সার্টিফিকেট পেশ করা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দিলি্ল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে ‘এক্সটারনাল’ ছাত্র হিসেবে বিএ পাস করেছিলেন তিনি। ওই বৈঠকে মোদির মার্কশিট এবং সার্টিফিকেটের কপি হাতে নিয়ে তার স্বপক্ষে দাঁড়ান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এবং মোদি সরকারের অন্যতম মুখ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। মার্কশিট সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে, ১৯৭৫ সালে ইংরেজি, হিন্দি, ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম পার্টের পরীক্ষায় একবারে উত্তীর্ণ হন মোদি। পরের বছর একমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া বাকি তিনটি বিষয়েই ফেল করেন। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে পার্ট থ্রির পরীক্ষা পাস করলেও পার্ট টু-এর পরীক্ষায় ইতিহাসে ফের ফেল করেন। ইংরেজির থেকেও তিনি হিন্দিতে দুর্বল ছিলেন। অবশেষে ১৯৭৮ সালে গিয়ে সেই ইতিহাসে পাস করেন। সব মিলিয়ে তৃতীয় ডিভিশনে পাস করেন তিনি।
অরুণ জেটলির যুক্তি, মোদি যখন দিলি্ল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক্সটারনাল ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন দেশে জরুরি অবস্থা। যারা সেই সময় সক্রিয় রাজনীতি করতেন, অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই তারা পরীক্ষা দিতেন। মোদির মতো ছাত্ররা তখন দলের হোল টাইমার ছিলেন। তার কথায়, ‘স্বাভাবিক কাজকর্ম পুরোদস্তুর করেও নিজের পড়াশোনা বজায় রাখা, গুজরাট থেকে দিলি্লতে এসে পরীক্ষা দেয়া, আম আদমির এমন উদাহরণ আর কী হতে পারে!’ সেই সময় দিলি্লতে এসে যার বাড়িতে থেকে মোদি পরীক্ষা দিতেন, এমন এক ব্যক্তিকেও বিজেপি দপ্তরে হাজির করানো হয় সাক্ষী হিসেবে।
নরেন্দ্র মোদি কোন ডিভিশনে পাস করেন, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই চলতে পারে না। কিন্তু ডিগ্রি সামনে আসার পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল ফের আসরে নেমে পড়ে, এক এক বছরের মার্কশিটে এক এক রকম নাম থাকায়। কোথাও নরেন্দ্র কুমার দামোদরদাস মোদি, কোথাও শুধুই নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ১৯৭৭ সালে দু’টি মার্কশিট নিয়েও প্রশ্ন তুলে কেজরিওয়ালের দলের নেতা আশুতোষ বলেন, ‘এই ডিগ্রিও একই রকমের ভুয়া।’
কিন্তু, এই ডিগ্রি সামনে আসার পর কেজরিওয়ালের নতুন আক্রমণের কী জবাব রয়েছে বিজেপির কাছে? বিজেপির বক্তব্য, উত্তর ভারতে নামের সঙ্গে ‘কুমার’ যোগ করার রেওয়াজ নতুন নয়। আর নাম বিভ্রাটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ভুল হতে পারে। কেজরিওয়ালকে তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাচাই করে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বপক্ষে নথিপত্র এত দেরি করে প্রকাশ্যে আনা হলো কেন?
বিজেপি সূত্রের মতে, এমএ পরীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী যেখানে প্রথম ডিভিশনে পাস করেছেন, তারপর বিএ-তে তৃতীয় ডিভিশনে পাস করার বিষয়টি সামনে আনা একটু অস্বস্তিকর ছিল। তার ওপর যখন বেশ কয়েক বার তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। কিন্তু আক্রমণের পারদ চড়ার এ বারে সেটিকে সামনে নিয়ে না আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। দ্বিতীয়ত, অরবিন্দ কেজরিওয়াল সম্প্রতি মোদির ডিগ্রির সঙ্গে কপ্টার-দুর্নীতিকে জুড়ে বিজেপির সনিয়া-বিরোধী আক্রমণকে ভোঁতা করে দিচ্ছিলেন। যন্তরমন্তরের সভায় তিনি বলেন, ‘মোদী কখনো সনিয়াকে গ্রেপ্তার করবেন না। আর সনিয়াও মোদির ভুয়া ডিগ্রি নিয়ে সরব হবেন না। এটা উভয়ের সমঝোতা।’ তাই ডিগ্রি-বিবাদ নিষ্পত্তি করে কপ্টার-দুর্নীতিতেই জোর দিতে চেয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আর তৃতীয়ত, উত্তরাখ-ে বিজেপি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। সে দিক থেকে অভিমুখ ঘোরানোও বিজেপির লক্ষ্য ছিল।