সিরিয়ায় পরমাণু চুল্লি ধ্বংসের নামে ২০০৭ সালে ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছিল, সেটা তারা গতকাল বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে। এসংক্রান্ত নথিপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। স্বীকারোক্তির পর ওই হামলাকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রত্যেকের জন্য সতর্কবার্তা অভিহিত করেছেন ইসরায়েলের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গন ২০০৭ সালের ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে, এমনকি হামলার এক বছরের মাথায় যুক্তরাষ্ট্র স্বীকারও করেছিল, ইসরায়েলই হামলাটি চালিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের দিক থেকে স্বীকারোক্তি এলো গতকাল। ‘অপারেশন অর্চার্ড’ শীর্ষক ওই গোপন অভিযানের ব্যাপারে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের আলোচনা করা এত দিন পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর সরকার এসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে।
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় দেই এজ্জোর এলাকায় ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১০টায় একটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। ইসরায়েল সরকারের গতকালের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০০৭ সালের ৫-৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী রাতে ইসরায়েলের জঙ্গি বিমানগুলো সিরিয়ায় নির্মাণাধীন পরমাণু চুল্লিতে সফলভাবে আঘাত করেছে এবং ধ্বংস করে দিয়েছে। ওই চুল্লির নির্মাণকাজ কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। এ অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ও গোটা অঞ্চলের জন্য ক্রমে স্পষ্ট হয়ে ওঠা হুমকিকে সফলতার সঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। সেই হুমকিটা ছিল সিরিয়ার পরমাণু সক্ষমতা।’ বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েল ওই হামলাসংক্রান্ত বেশ কিছু ছবি, ভিডিও চিত্র ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোপন কাগজপত্র প্রকাশ করেছে।
ওই হামলার পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, সিরিয়া গোপনে পরমাণু চুল্লি নির্মাণের চেষ্টা করছিল এবং ইসরায়েল সেটা ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১১ সালে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা দাবি করে, সিরিয়ার দেইর এজ্জোরে মরু এলাকায় নির্মাণাধীন স্থাপনার সঙ্গে পরমাণু চুল্লির অনেক মিল ছিল। সংস্থাটি আরো দাবি করে, উত্তর কোরিয়ার সহায়তায় সিরিয়া স্থাপনাটি নির্মাণ করছিল। সিরিয়া অবশ্য বরাবরই পরমাণু স্থাপনা নির্মাণের কথা অস্বীকার করে আসছে।
গতকাল ইসরায়েলের স্বীকারোক্তির পর দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিদগর লিবারম্যান বলেন, এক দশক আগের ওই অভিযান ‘মধ্যপ্রাচ্যের প্রত্যেকের জন্য’ একটা বার্তা।
ইসরায়েলের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জ সরাসরি ইরানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘ইরানের মতো যেসব দেশ ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি’, সেসব দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকাটা কখনোই ইসরায়েল মেনে নেবে না।
না বললেই নয়, ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা এক চুক্তির আওতায় ইরান নিজেদের পরমাণু কার্যক্রম আপাতত সীমিত রেখেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে চলেছেন এবং সত্যি তিনি সেটা বাতিল করলে ইরান আবার পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি চালু করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।