সিঙ্গাপুরভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিপিভিটিআরের পরিচালক রোহান গুণারত্নে ১৪ দেশের পুলিশপ্রধানদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
রোহান গুণারত্নে তার উপস্থাপনায় জঙ্গিবাদ দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা হোম গ্রোন, এটা সত্যি নয়। হামলা চালিয়েছিল আইএস।’
গত বছরের ১ জুলাই হামলার সময়ে হামলাকারীরা যেসব মাধ্যমে যোগাযোগ করে, সেগুলোর প্রতি আইসিপিভিটিআর নজর রেখেছিল বলে জানান তিনি।
গুণারত্নে বলেন, সাধারণ অপরাধীরা পুলিশ দেখে বাঁচতে পালায়। কিন্তু জঙ্গিরা মরতে চায়। তারা হলি আর্টিজান দখল করে কোনো ধরনের দর-কষাকষিতে যায়নি। কাজেই বিশেষ কোনো বাহিনীর জন্য পুলিশের অপেক্ষা করার দরকার ছিল না। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা দরকার বলে উল্লেখ করেন রোহান। তা ছাড়া পুলিশ, সেনাবাহিনী, সব ক’টি গোয়েন্দা সংস্থার একসঙ্গে কাজ করা দরকার বলেও জানান রোহান গুণারত্নে।
গত ১ জুলাই ঢাকার সবচেয়ে সুরক্ষিত বলে পরিচিত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ, বিদেশি নাগরিক, জঙ্গি, রেস্তোরাঁর পাচকসহ ২৮ জন নিহত হন।
এদিকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে ঢাকায় বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তিন দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রোববার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনাম।
সম্মেলনে ইন্টারপোলের আইজিসিআই, এফবিআই, আসিয়ানপোল ও আইসিআইটিএপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেবেন। এর মধ্যে একটি সেশনে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হবে।
‘চিফ অব পুলিশ কনফারেন্স অব সাউথ এশিয়া অ্যান্ড নেইবারিং কান্ট্রিস অন রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্ভিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ শীর্ষক এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ইন্টারপোল মহাসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক প্রমুখ বক্তব্য দেবেন।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আবদুল রহমান, মালয়েশিয়ার আইজিপি খালিদ আবু বকর, মিয়ানমার পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো সু উইন, দক্ষিণ কোরিয়ার সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট জু মিন লি, শ্রীলংকার আইজিপি পুজিথ সন্ধি বন্দরা জয়সুন্দর, ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগেন স্টক, ফেসবুকের ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজার বিক্রম লাংয়ে, আসিয়ানপোলের নির্বাহী পরিচালক ইয়োহানেস আগুস মুলিয়োনো, আইজিসিআইর প্রটোকল অ্যান্ড কনফারেন্স বিভাগের প্রধান সিন লি চুয়া, আইসিআইটিএপির পরিচালক গ্রে বারসহ ৫৮ বিদেশি সম্মেলনে যোগ দেবেন।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, ১৪টি কর্ম-অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য তুলে ধরবেন। জঙ্গিবাদ দমন, মানবপাচার, অর্থনৈতিক অপরাধ, সন্ত্রাসী অর্থায়ন, মাদক পাচার রোধ, অবৈধ অস্ত্র চোরাচালান ঠেকানো, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি বিষয় আলোচনায় স্থান পাবে। সম্মেলন শেষে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমনসহ আন্তঃদেশীয় কর্মপন্থা নির্ধারণ করে ‘যৌথ ঘোষণা’ সই হবে।
সম্মেলনে পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধির উপস্থিত না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইজিপি বলেন, ‘পাকিস্তানকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে সবসময় যেসব দেশের যোগাযোগ হয়, তাদের নিয়েই এ সম্মেলন।’