কারো ছিল দু’চালা খড়-কুটোর ঘর। কারোর ছিল বাঁশের খুটি ওপরে পলিথিনের চালা। কেউ আবার খুপড়ি ঘরে বসবাস। ঝড়-বৃষ্টি এলেই ভয়ে ভয়ে এসব ঘরে বসবাসকারীরা সন্তানদের নিয়ে কাটত সংসার। এমন অসহায় ২৯৮ পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নতুন ঘরে প্রথমবার ঈদ উদযাপন করলেন। ঈদের দিনে এসব নতুন গৃহের শিশুরাও ছিল উল্লাসিত। কোরবানীর আগেই আরও ১৬৯টি পরিবারের নতুন গৃহে উঠবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্রা দাস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নতুন গৃহে উঠবেন এবং যারা উঠেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে ১১৬ ভিক্ষুক, ৫৪ গৃহপরিচারিকা ও ২৯৭ দিনমজুর পরিবার। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২৯৮টি পরিবারের নতুন গৃহে নির্মান ও হস্তান্তর করা হয়। বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম.এম ফরিদ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে গৃহহীন এসব পরিবারের তালিকা তৈরি ও গৃহ নির্মান সম্পন্ন হয়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মহতী উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেকটি অসহায় পরিবারের কাছে গিয়ে প্রাপ্যতা যাচাই করে ঘর দেয়া হয়।
স্বামী পরিত্যাক্তা সালমা বেগম। উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনের শিকার ঢনঢনিয়া গ্রামে বাবার বাড়ীর পাশে খুপড়ি তার বসবাস। বর্ষা মৌসুম এলেই জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়-বৃষ্টির জন্য কোন আত্মীয় বাড়ীতে নেয় আশ্রয়। এক মেয়ে সন্তান সরকারি উপবৃত্তি সুবিধা নিয়ে আজ এইচএসসিতে অধ্যায়নরত। বিয়েও দেয়ার সময় হয়ে এসেছে কিন্তু ঘর নেই। বর পক্ষ দেখতে আসলে তাদের বসতে দেয়ার জায়গা নেই সালমা বেগমের। প্রেম প্রেম খেলা ও বিয়ে নামক কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ৩ মাসেই শেষ হয়ে গেছে সালমার জীবন থেকে। স্বামী ফেলে যাবার কয়েক মাস পরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সালমা। ওই মেয়েকে ঘিরেই তার সংসার তবে ঘরহীন খুপড়িতে। এ বছর প্রথম নতুন ঘরে সালমা কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করেছে। আলেয়া বিবির বাড়ি উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের যৌতা গ্রামে। ২২ বছর ধরে দিনমজুর স্বামী মোশারেফ খলিফা ও সন্তানসহ কষ্টে কাটছিল আলেয়া বিবির। প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করে সন্তান সাবিনা, সজল ও শারমিনদের একবেলা-দু’বেলা খাওয়াতে হয়েছে। বড় ও মেঝ সন্তান শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে না পারলেও সরকারের উপবৃত্তি সুবিধা পেয়ে শারমিন আজ ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া। মোশারেফের মরহুম বাবা আজাহার খলিফা থেকে প্রাপ্ত স্থানীয় মাপের ৩ কড়া (৯ শতাংশ)) জমিতে খুপড়ি ঘর করে একযুগের বর্ষা মৌসুমের দিনগুলো গুনে পার করেছে। স্বপ্ন ছিল ওই জমিতে একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরায় যার দশা, তার আবার স্বপ্ন পূরণ? স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার জন্য বাসস্থান প্রতিশ্রুতি ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নাম দেয় সরকার। ২৯৭ বর্গ ফুটের সেমিপাকা স্বপ্নের সে ঘরখানা পায় ঈদের আগেই। তাই আলেয়া-মোশারেফ দম্পত্তি অন্যরকম ঈদ উদযাপন করেন এ বছর।  তিন সন্তানের জননী ডালিম বিবি। একই এলাকার মরহুম ছত্তার প্যাদার ছেলে দিনমজুর মোঃ আলমগীর প্যাদার সঙ্গে বিয়ের পর অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। এরই মধ্যে আশিক (১৪), ইয়ামিন (১০) ও ইয়াসিন (৭) জন্ম নেয় ডালিম-আলমগীর দম্পত্তির ঘরে। স্থানীয় মাপের ৪ কড়া নিচু জমিতে খড়ের ঘরে কাটিয়ে দিয়েছেন সংসার জীবন। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রবণ উপকূলীয় অঞ্চল রনগোপালদী ইউনিয়নে বসবাস এদের। ঝড় হলেই আশঙ্কা এই বুঝি কুড়েঘর গেল উড়ে। সিডর, নার্গিস, আইলা, মহোসেন, কোমেন কোন ঝড়ই ক্ষমা করেনি ডালিমদের। ঘর ভাঙ্গা আর ঘর গড়া ডালিমদে নিয়তি। সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছেন ঝড়ে রক্ষা পাওয়ার জন্য, ঘর না ভাঙ্গার জন্য। কিছু ভাল খুঁটি দিয়ে একটি শক্তপোক্ত ঘর তাদের আজন্ম চাওয়া। ডালিম-আলমগীর দম্পত্তিও  ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে মহাখুশি। 
একইভাবে যৌতার সোহেল, চরবোরহানের প্রতিবন্ধী সাজেদা, বেতাগীর অনীল, চর ঘুনির ঈমাম সিকদার, পূর্ব আলীপুরার জেলে আল-আমিন, দশমিনার রিক্সাচালক শুক্কুর, খলিশাখালীর দিনমজুর জসিমসহ ২৯৮টি পরিবার ঈদের আগে ঘর পেয়ে মহাখুশিতে ঈদ পালন করেছেন। 
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব বিশ^াস বলেন, প্রত্যেকটি গৃহ নির্মণের বরাদ্দ ছিল একলাখ টাকা। আমরা সার্বক্ষনিক তদারকি করে মানসম্মত গৃহ নির্মান করেছি।

 
Top