পুঁজিবাজারের পতন যেন কোনোভাবেই থামছে না। বিক্রির চাপে প্রতিদিনই কমছে শেয়ারের দাম ও মূল্যসূচক। ক্রমাগত নিম্নমুখী মূলধন উঠিয়ে বাজার ছাড়ছে অনেকেই। এতে কমেই চলছে বাজার মূলধন। অব্যাহত শেয়ারের দাম কমায় লোকসানে পড়েছে ‘ক্ষুদ্র’ বিনিয়োগকারীরা। গত এক সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন কমেছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ২২৯ পয়েন্ট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের বিনিয়োগসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলার বর্তমান পুঁজিবাজারে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের লাগাম টানতেই ২০১৪ সালে এই সার্কুলার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থায় এই সার্কুলার তেমনটা সমস্যা করেনি। সম্প্রতি বাজারের আকার ও শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগসীমাসংক্রান্ত সার্কুলারটি ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে আখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কারণে ফান্ড থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে পারছে না।
ডিএসই সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারের বর্তমান নিম্নমুখী অবস্থার উন্নয়নে ব্যাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে ২০১৪ সালে সার্কুলার স্থগিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সেই বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাতেরও সময় খুঁজছে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইর এক পরিচালক গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছে আমাদের দাবির সমাধান করতে। তবে তারা এখনো কর্ণপাত করছে না। এই সার্কুলার যত দ্রুতই তুলে নেবে বা স্থগিত করবে, পুঁজিবাজারও গতিশীল হবে। অনেক ব্যাংকে অলস ফান্ড পড়ে আছে, বিনিয়োগ সীমার মধ্যে থাকতে বিনিয়োগ করতে পারছে না।’
গত এক সপ্তাহের (১৮-২২ মার্চ) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাজারের বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। প্রধান সূচক কমেছে ২.৪৫ শতাংশ বা ১৪০ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ২.০৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৭৯ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেও (২৫ ও ২৭ মার্চ) বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ারের দাম নিম্নমুখী। একই সঙ্গে বাজার মূলধন ও সূচকও কমছে। শেয়ারের দাম কমায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ লোকসানেও শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছে আবার কেউ বাজার ভালো হওয়ায় আশায় বসে আছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ৮৪ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। ৩৩৩ কম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ২৮২ কম্পানির। আর সূচক কমেছে ৭৮ পয়েন্ট বা ১.৪ শতাংশ। আর বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
গত সাত কার্যদিবসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আশঙ্কাজনক হারে কমছে সূচক ও লেনদেন। বাজার মূলধনও কমেই চলেছে। শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারী বেরিয়ে যাওয়ায় বাজারে অর্থসংকটেরও সৃষ্টি হয়েছে এমন দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
১৮ মার্চ ডিএসইর মূলধন ছিল চার লাখ এক হাজার ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার এই মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ২২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছে ২২৯ পয়েন্ট। পাঁচ হাজার ৭২১ পয়েন্টের প্রধান সূচক গতকাল দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯১ পয়েন্ট।
গতকালের বাজার : মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকে বড় পতন হয়েছে। ডিএসইতে সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন। আর সিএসইতে সূচক ও লেনদেন উভয়ই কমেছে। যদিও আগের দিনও সূচক ও লেনদেন কমেছিল।
মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছে ৭৮ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছিল ১০ পয়েন্ট।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেন শুরুর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে সূচক নিম্নমুখী হয়। পরে শেয়ার বিক্রি বাড়লে সূচকের পতনও ত্বরান্বিত হয়। এতে দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৯১ পয়েন্ট। ডিএস-৩০ মূল্যসূচক ১৮ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৫৬ পয়েন্ট ও ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ১৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৩৩ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ২৮২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪ কম্পানির শেয়ারের দাম।
অপর বাজার সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর সূচক কমেছে ১৩৭ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া ২২৭ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২৯টির, দাম কমেছে ১৯০টির আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৮ কম্পানির শেয়ারের দাম।