এরা এখানে দিন বললে দিন,রাত বললে রাত জঞ্জালে ভরা দেশে সত্য কথা বলার অপরাধে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়...
এমনিতে লিখতে গেলে লেখার বিষয় খুঁজে পাই না যাওবা সমসাময়িক ইস্যুর বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুই একখানা বিষয় খুঁজে পেয়ে লিখবো বলে সিলেক্ট করি, লিখতে বসলেই ঝামেলাটা বাধে দু-চার লাইন মাখামাখির পর আর এগুতে পারি না যতই এগুতে চাই ততই ঐখানেই থেমে থাকি মাথায় টোকা দিয়ে দেখি বাজে ঠন ঠন শব্দ হয় মানে মাথা পুরাই খালি রাগে দুঃখেআমাকে দিয়ে হবে নাটাইপের অসহায়ত্ব নিয়ে ভ্যাগা ভ্যাগা মুখ করে বসে থাকি
কালে ভাদ্রে আবার আপনা আপনি দু একটা বিষয় বিশদভাবে মাথায় চলে আসে মাথায় চলে আসা মাত্রই আমি তা মাথা পেতে নিয়ে কিবোর্ড চালানো শুরু করি কিন্তু তখন আবার শুরু হয় আরেক টাইপের ঝামেলা মাথার মধ্যে তখন হাজার বিষয় এসে ভিড় করে আমি আবার ভিড় সহ্য করতে পারি না তাই কোনমতে ভিড় ঠেলে ঠুলে নির্ধারিত বিষয়টিকে কোলে করে মারি এক দৌড় তারপরে চিপা চাপায় বসে নীরবে কিবোর্ড চালানো শুরু করি যাই হোক অনেক ফাউ প্যাঁচাল পাড়লাম, এবার বিচি ভাঙি মানে অাসল কথায় অাসি
গত কয়েক দিন ধরে একটি চতুর্দশপদী কবিতার লাইন আমার মাথার ভেতর প্রেমিকার মতো জেঁকে বসে অাছে লাইনটা হলো- ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন
আহা, কথাটা একসময় কত না সত্য ছিল আর সত্য ছিল বলেইতো মধুকবি একে অবহেলার অপরাধে অনুতপ্ত হয়ে লিখেছিলেন, ‘তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি
এখন আর সেই মধুকবিও নাই, আর সেই দিনও নাই দিন পাল্টে গেছে তার সঙ্গে সঙ্গে কবিতার লাইনটাও আমার মনে হয় বদলানো উচিত কবিতার লাইনটা আমার মতে হওয়া উচিত- ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ জঞ্জাল
কারণ এখন এই লাইনই বঙ্গভাণ্ডারের সঙ্গে যায় লাইন আর যায় না কেনো যায় না? না যাওয়ার কারণ কী? না যাওয়ার কারণ কি মুখে বলতে হবে? সম্প্রতি জাফর ইকবাল স্যারের ওপর হামলায় তাকে নিয়ে, বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের নিয়ে এবং কো-পাইলট পৃথুলাকে নিয়ে ফেসবুকে যে নোংরা প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে সে দিকে একটু নজর বোলালেই বোঝা যায় লাইনটা কেনো অার এই বঙ্গ ভাণ্ডারের সঙ্গে যায় না
যাই হোক সেদিকে আমি যাবো না কারণ এই ইস্যুগুলো মোটামুটিহ্যাজ গন টাটকা একটা ইস্যু টান দেই বরং অতি সম্প্রতি একটি নব নির্মিত ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের সঞ্চালক মোশাররফ করিম ধর্ষণে যে নারীর পোশাক দায়ী নয় ভেতরের পশুত্বটাই দায়ী নিয়ে দুটো কথা বলেছিলেন
তিনি বলেছিলেন, ‘পোশাকই যদি দায়ী হবে তাহলে সাত বছরের বা চার বছরের মেয়েরতো ধর্ষিত হওয়ার কথা না কেননা সাত বা চার বছরের মেয়ের পোশাক পরা বা না পরা সমান কথা তাকে দেখেতো মাথা খারাপ হওয়ার কিছু নেইআর সঙ্গে সঙ্গে নীল সাদা দুনিয়ার বাংলা ভাষাভাষীদের এলাকায় তুমুল হাউ কাউ শুরু হয়ে গেলো হাউকাউওয়ালাদের কথা হলো ধর্ষণের জন্য পোশাক দায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ এই হাউকাউই শক্তিশালীভাবে দাঁত কিড়িমিড়ি করে প্রমাণ দেয় যে, বঙ্গ ভাণ্ডারে এখন আর বিবিধ রতনে ভর্তি না, বঙ্গ ভাণ্ডারে এখন বিবিধ জঞ্জালে ভর্তি জঞ্জালই যদি ভর্তি না হতো তাহলে মোশাররফ করিমের একটি সুন্দর সুস্থ বক্তব্যের উত্তর এত অসুস্থ ভাবে আসতো না
মোশাররফ করিমের ভিডিওটি আমি দেখেছি ভিডিওটিতে তার বক্তব্যের কোথাও কোনো উগ্রতা ছিল না,কোথাও কোনো কুরুচিপূর্ণ উস্কানি ছিল না, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কোথাও কিছু ছিল না একটি সুস্থ বক্তব্য ছিল ওটা একটি শিক্ষামূলক বক্তব্য ছিল
তারপরও এই সুস্থ শিক্ষামূলক বক্তব্যটির দায়ে তাকে বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার দোষে দোষী করা হলো (ধর্ম নিয়ে কিন্তু একটি কথাও সেখানে বলা হয়নি), তাকে নাস্তিক আখ্যায়িত করা হলো (আমার জানামতে ঈশ্বরের অস্তিত্বে অস্বীকারকারীকে নাস্তিক বলা হয় যদিও এমন কোনো বাক্য, শব্দ বা বর্ণ পর্যন্ত তার বক্তব্যে ছিল না) ফেসবুকে ইউটিউবে তাকে নিয়ে যা তা কন্টেন্ট পোস্ট করা শুরু হলো, সেই পোস্টগুলোতে হাজার লাইক কমেন্ট শেয়ার শুরু হলো,যা এখনো চলমান আবার শুনলাম তার গ্রামের বাড়িতে নাকি হামলা করা হয়েছে (জানি না এটা সত্য না মিথ্যা)
নিরুপায় মোশাররফ করিমকে ফেসবুকে ক্ষমা প্রার্থনা করে পোস্ট দিতে হলো যা প্রমাণ করে এখানে মিথ্যাবাদীর দল ভারি, এখানে অসুস্থ বিকৃত মস্তিষ্কের চাষবাষ হয় অসত্যের বিকৃত মানসিকতার  এখন বেশ দাপট এরা এখানে দিন বললে দিন,রাত বললে রাত জঞ্জালে ভরা দেশে সত্য কথা বলার অপরাধে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়
পরিশেষে মোশাররফ করিমের হয়ে বঙ্গজননীর উদ্দেশে মধুকবির কবিতাটির প্রথম দুটি লাইন উল্টো করে লিখে দিলাম
হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ জঞ্জাল
তা সবে অবোধ আমি, অবহেলা করি-
জঞ্জাল অপমানে করিয়াছি ভুল’  
সূত্রঃ প্রিয় ডট কম

 
Top