বর্তমানে
দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং হচ্ছে। বেসরকারি
হিসেব মতে এ সংখ্যা প্রায় কোটিখানেকের কাছাকাছি। মাদক
সেবীদের মধ্যে যদিও পুরুষদের সংখ্যাটাই বেশি, তবে নারীরাও যে খুব একটা পিছিয়ে রয়েছে তাও নয়। বাদ
পড়ছে না, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরাও। যত
দিন যাচ্ছে, ততই যেন মাদক সেবীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
দেশের
মাদকসেবী এক নারী কীভাবে এই সর্বনাশা ইয়াবায় আসক্ত হয়েছিলেন বিবিসি বাংলাকে সেই বর্ণনা দিয়েছেন।
ইয়াবায়
আসক্ত হওয়ার নিয়ে বিবিসিকে দেয়া তার বক্তব্যের কিছু চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
শুরুতেই
বলে রাখি সামাজিক কারণে ওই নারীর নাম গোপন রাখা হলো।
‘আমার
দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে ইয়াবার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি
একজন সরকারি কর্মকর্তা। সে
আমাকে অনেক ভালোবাসতো। একদিন
সে বাড়িতে অনেকগুলো ইয়াবা নিয়ে আসে।’
ওই
নারী তার স্বামীর কাছে জানতে চান ট্যাবলেটের মতো দেখতে এগুলো কী? স্বামী তখন জানান, এটা খুব ভালো জিনিস। এখন
এটা সবাই খায়, মেয়েরাও খায়। আর
তুমি তো আমার স্ত্রী। সুতরাং
তুমিও আমার সঙ্গে খাবে।
ওই
নারী বলেন, ‘তখন আমি মনে করলাম, যদি তার সঙ্গে বসে না খাই তাহলে হয়তো সে বাইরের মেয়েদের সঙ্গে গিয়ে খাওয়া শুরু করবে। তখন
আমি তার (স্বামী) সঙ্গে খাওয়া শুরু করি।’
স্বামী-স্ত্রী মিলে বাড়িতে বসে এভাবে কয়েক মাস ধরে একসঙ্গে ইয়াবা খেতে থাকেন।
ইয়াবায়
আসক্ত ওই নারী বলেন, ‘তিন মাস পর আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। এত
শুকিয়ে যাই যে আমাকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ নারীর মতো দেখাতো। শরীর
পুরোটা কালো হয়ে গিয়েছিল। আমার
শরীরে অর্ধেক কাপড় থাকতো, অর্ধেক থাকতো না। আমি
সারাক্ষণ মাথা আঁচড়াতাম। মনে
হতো মাথায় শুধু উকুন। যে-ই দেখবে সে-ই আমাকে পাগল মনে করত। মা
যখন আসত, তখন আমি তার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করতে শুরু করি। আমি
চোখে অনেক কিছু দেখতে থাকি। মুরগির
মাংস দেখলে মনে হতো তার ভেতরে অনেক কেঁচো। মাথার
চামড়াকে মনে হতো লাল রক্ত। এও
মনে হতো, মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। খেতেও
পারতাম না। কিছু
মুখে দিলে সেটা রাবারের মতো শক্ত লাগত।’
ওই
নারী আরো বলেন, ‘তখন আমি খুব অসুস্থ। আমার
মা একদিন ভাত মাখায়ে আমাকে খাওয়াতে যাবেন, তখন আমার মনে হলো আমাকে তিনি কেঁচো খাওয়াচ্ছেন। কিছুক্ষণ
পর আমি বমি করতে শুরু করি। তখন
তারা আমাকে আমার মায়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে
আমাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বামীকে
না জানিয়ে আমার চিকিৎসা চলতে থাকে।
দীর্ঘ
তিন বছরের মতো মায়ের বাসায় ছিলাম। তারপর
নিজের বাসায় চলে যাই। তখন
আবার স্বামী প্রত্যেকদিন ইয়াবা নিয়ে আসতে শুরু করে। প্রতিদিন
রাতে সে ২০টা ইয়াবা খেত। সে
নিজে নষ্ট এবং তার নোংরামির শিকার আমিও হয়েছি। তারপর
আমি আবারও ইয়াবাতে আসক্ত হয়ে পড়ি।’