তারকাদের
বিয়েগুলো হয় বেশ ঘটা করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে। কিন্তু
ভাঙনের শব্দটি সহজে শোনা যায় না। তেমনি
কলকাতার অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের বেলাতেও হয়েছে। কৃষাণ
ভ্রজ যাদবের সঙ্গে বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকেই খবরের শিরোনামে ছিলেন তিনি। কখনো
বাগদান, কখনো বিয়ের কেনাকাটা, কখনো নিজেদের সম্পর্কটাকে সহজ করে নিতে একটু ঘুরতে যাওয়া, গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে হানিমুন পর্যন্ত এই নায়িকার বিয়ের খবর পাওয়া গেছে।
কিন্তু
ভেঙে গেছে তার সংসার, সেটি জানা গেল বেশ অনেক পরেই। যদিও
কবে কোথায় কী কারণে ভেঙ্গেছে তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে নায়িকা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন স্বামী কৃষাণের সঙ্গেও ডিভোর্স হয়ে গেছে তার। বর্তমানে
একমাত্র পুত্রকে নিয়ে সিঙ্গেল মাদারের জীবনযাপন করছেন বেশ সুখে-আরামেই।
সম্প্রতি মুক্তি পেতে যাচ্ছে শ্রাবন্তীর নতুন ছবি ‘জিও পাগলা’। রবি কিনাগির পরিচালনায় এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন সোহম, হিরন, পায়েল সরকার, ঋত্বিকা সেন, বনি, কৌশানী। প্রায় এক বছর পর রুপালি পর্দায় ফিরছেন কলকাতার তুমুল জনপ্রিয় এই নায়িকা। মজার ব্যাপার হলো এই ছবিতে শ্রাবন্তীর বিপরীতে আছেন তার কিশোরবেলার প্রিয় নায়ক যিশু সেনগুপ্ত। দুজনের রসায়নটা নাকি বেশ দারুণ জমেছে অফ এবং অন- দুই স্ক্রিনেই। কানাঘুষাও হচ্ছে টালিগঞ্জের সব্খানে, প্রেমে পড়েছেন এই দুই তারকা।
সেই
কানাঘুষার হাত ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডিভোর্স নিয়ে মুখ খুলেছেন শ্রাবন্তী। এই
সময়কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অকপটেই বলে দিলেন, ‘দু’জনে মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিচ্ছেদের। বনিবনা
না হলে একসঙ্গে মিথ্যে সুখে থাকার কী লাভ। আমার
কোনো অভিযোগ নেই আমার প্রাক্তনের বিরুদ্ধে। আমি
চাই, আমার সঙ্গে না হোক , কিন্তু সে যেন ভালো থাকে।’
শ্রাবন্তী
আরও বলেন, ‘আমি এখন ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছি না। কাজ
আর ছেলের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। ঝিনুক
এবার ক্লাস এইটে। ওর
স্কুল যেতে সুবিধে হবে বলে বেহালা থেকে বাইপাসের ধারে বহুতল ভবনে বাসা নিয়েছি। বেশ
ভালো আছি মা-ছেলে।’
বিচ্ছেদের
হতাশা ছুঁতে পারেনি শ্রাবন্তীকে, এমনটাই জানালেন তিনি। বললেন,
‘ডিপ্রেসড হয়ে নিজের ক্ষতি করতে পারব না। কারণ
আমার ছেলে, বাবা-মা সবসময় আমায় আগলে রাখে। মাঝেমাঝে
ভাবি এত ভালোবেসেও আমি ভালোবাসা পেলাম না। তারপর
ভাবি বাইরের লোক যাই বলুক, আমি তো জানি কারও সঙ্গে কেন সংসার করতে পারিনি। বাইরের
লোক কী বলল, তা নিয়ে আর ভাবি না। তারা
কেউ আমার সন্তানকে বড় করবে না। একটাই
জীবন। সৎ
পথে কাজ করলে ভগবান পাশে থাকবেনই।’
নিজেকে
আবেগপ্রবণ দাবি করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি খুব আবেগপ্রবণ। সংসার
করতে ভালোবাসি। কিন্তু
এখন মনে হয়, শুধু বর থাকলেই সংসার হবে এমন নয়। বাবা
-মা, ছেলেকে নিয়েও সংসার হয়। প্রতিটা
মেয়েই চায় সংসার করতে। কিন্তু
আমার কপালে যা লেখা ছিল তাই হয়েছে। ভবিষ্যত
কীরকম হবে জানিনা। তবে
আমি আগের থেকে পরিণত হয়েছি। দিদি,
দিদির বন্ধুরা আছে। ওরা
আমায় একাকিত্বে ভুগতে দেয় না। এখন
কাজেও অনেক বেশি মন দিতে পারছি। মাঝে
এক বছর কাজে অতটা মন দিইনি। আর
ছেলেকে নিয়েও ভাবনা নেই। ও
আমার সেরা বন্ধু। ভীষণ
বোঝে আমায়। আর
ভীষণ পজেসিভ।’
কমার্শিয়াল
ছবির নায়িকা হিসেবে পরিচিত হতেই বেশি আনন্দ পান দাবি করে শ্রাবন্তী বলেন, ‘কোনওরকম দ্বিধা ছাড়াই বলছি, আজকে শ্রাবন্তী ‘শ্রাবন্তী’ হয়েছে বাণিজ্যিক ছবির জন্য। অভিনেত্রী
হিসেবে আমার অবশ্যই অন্য ধরনের ছবি করা উচিত। কিন্তু
যখন গ্রামের স্টেজ শো-তে যাই, তখন গ্রামের দর্শকদের কথা থেকে বুঝি, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মানুষ অন্য ধরনের ছবি বোঝেন না। দেব
-শ্রাবন্তী বা জিৎ-শ্রাবন্তী কী করল সেটা দেখার জন্যই তারা অপেক্ষা করেন।
এখন
আবার অপেক্ষা যিশু -শ্রাবন্তীর জন্য। আসলে
বাণিজ্যিক ছবি করতে অনেক বেশি দক্ষতার প্রয়োজন হয়। একসঙ্গে
নাচতে হবে, ভালো অভিনয় করতে হবে, আবার ন্যাকামোও করতে হবে। ‘জিও
পাগলা’-তে সবরকমই করেছি। আশা
করছি ছবিটি ধুমধাম করেই সফল হবে।’
এদিকে
কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবি ‘উমা’-তে অভিনয় করেছেন শ্রাবন্তী। এই
ছবিতেও তার বিপরীতে আছেন যিশু সেনগুপ্ত। ছবিটি
দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তার।
প্রসঙ্গত,
কৃষাণ ছিলেন শ্রাবন্তীর দ্বিতীয় স্বামী। এর
আগে শ্রাবন্তীর বিয়ে হয়েছিল চলচ্চিত্র নির্মাতা রাজীব চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেসময়
শ্রাবন্তী-রাজীবের ঘরে জন্ম নেয় ঝিনুক নামের এক পুত্র সন্তান। কিন্তু
তাদের সে সংসার টেকেনি। পাশাপাশি
শোনা যায়, নায়িকা হবার আগেই বিবাহিত ছিলেন শ্রাবন্তী। সৌরভ
চক্রবর্তী নামের এক যুবককে ভালোবেসেই পারিবারিকভাবে বিয়ে করেছিলেন এই অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্রে
এসে নাম লেখানোর পর নানা কারণ আর মতবিরোধে ভেঙ্গে যায় সেই সংসার। কিন্তু
সেই বিয়ের কথা স্বীকার করেন না শ্রাবন্তী নিজে, আর টালিগঞ্জের কোথাও তার প্রমাণও পায়নি কেউ। তাই
রাজ চক্রবর্তীই এই নায়িকার প্রথম স্বামী হিসেবে পরিচিত।