দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৫০ সালে ইসরাইলের জন্ম। যাত্রার শুরুর দিকে পরিস্থিতি মোটেও অনুকূলে ছিলো না দেশটির জন্য। জন্মের শুরুতে প্রতিনিয়তই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে হয়েছে ইসরাইলিদের। আরবদের
মতো প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে এতোটা সমৃদ্ধ ছিলো না ইসরাইল। ছিলো না কোনো তেল বা খনিজ পদার্থ। তাই প্রতিকূল অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে প্রয়োজন ছিলো বাণিজ্যিক অংশীদার। এরপরেই
ইসরাইলের এক প্রতিনিধি দল লাতিন আমেরিকায় সফরের পরিকল্পনা করে। লক্ষ্য একটি। বাণিজ্য। বাণিজ্যিক
প্রতিনিধিদল যখন লাতিন দেশগুলোতে বাণিজ্যের জন্য যায়, তখন বেশির ভাগ লাতিন দেশের কাছেই তা হয়ে ওঠে হাস্যকর। কারণ কমলা, কেরোসিনের চুলা এবং নকল দাঁত ছাড়া বাণিজ্য করার মতো কিছুই ছিলো না ইসরাইলের কাছে। বাণিজ্যের
জন্য প্রতিনিধিরা আর্জেন্টিনায় যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনা নিজেরাই কমলা চাষ করে এবং ততদিনে আর্জেন্টিনার মানুষদের ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক গ্রিড পৌঁছে গেছে। তাই ইসরাইলের বাণিজ্য চুক্তি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যায়। এখন ২০১৭। বর্তমান ইসরাইলকে দেখলে ৬৭ বছর আগের ইসরাইলের অবস্থা মানতে একটু কষ্ট হয়েই যায়। আজ বিশ্বের মানচিত্রে সবচেয়ে হাই-টেক’ পরাশক্তি দেশ ইসরাইল। শুধু তাই নয়। অস্ত্র রপ্তানি করে বছরে প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন আয় করা ইসরাইলকে; বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও গণনা করা হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ড্রোন রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব বাজারের ৬০ ভাগ আজ ইসরাইলের দখলে। রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ব্রাজিলের মতো শক্তিশালী দেশগুলো ইসরাইলের গ্রাহক। ২০১০ সালে ন্যাটোভুক্ত ৫ দেশই আফগানিস্তানে ইসরাইলের ড্রোন উড়িয়েছে। বয়সের দিক দিয়ে দেশটি এখনো ৭০-এর ঘরেও পা রাখেনি। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের মধ্যে একটি হয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীদের মধ্যে অন্যতম হলো ইসরাইলের বাহিনী। প্রযুক্তির দিক থেকে এর থেকে অত্যাধুনিক আর কোনো সামরিক বাহিনী বিশ্বে এই মূহুর্তে খুব বেশি কেউ নেই। আয়তনের
দিক থেকে ইসরাইল খুব বেশি বড় নয়। কিন্তু জিডিপি-র প্রায় ৪.৫ শতাংশ অর্থ ইসরাইল ব্যয় করে গবেষণা এবং উন্নয়নের খাতে। যার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয় সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে। এছাড়াও,
সংস্কৃতি উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার দিকেও ব্যাপক জোড় দেয় ইসরাইল। খুব কম বয়স থেকেই ইসরাইলিদের বাধ্যতামূলক ভাবে সামরিক সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। মৃত্যুর ঝুঁকি আছে-এমন সব মিশনেও অংশ নিতে হয়। এ কারণেই ইসরাইলিরা অন্য জাতিদের তুলনায় ঝুঁকি নিতে বেশি পছন্দ করে থাকে। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই যেখানে এক ইসরাইলি নিজের জীবনকে বাজি রেখে শত্রুদের সীমান্তে যুদ্ধ করে; সেখানে পশ্চিমা দেশগুলোতে একই বয়সের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কলেজে কিভাবে যাবে সেটি নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ইসরাইলের
জন্মের সূত্রপাত থেকেই তাদের রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে। প্রতি দশকেই করতে হচ্ছে যুদ্ধ। মূলত নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার লক্ষেই প্রতিনিয়ত ইসরাইলিদের নতুন নতুন বুদ্ধি নিয়ে আসতে হচ্ছে। উন্নত করতে হচ্ছে তাদের সামরিক বাহিনী এবং অস্ত্র সরঞ্জামকে। রোবটের
ওপর এখন পর্যন্ত অনেক সিনেমাই নির্মিত হয়েছে। যেখানে মানুষ রোবট তৈরি করে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। পর্দায় এতদিন যা ছিলো অবাস্তব তা বাস্তব করেছে ইসরাইল। ইসরাইলই প্রথম দেশ যারা সীমান্তে সৈন্যের পরিবর্তে রোবট ব্যবহার করছে।
এফ-৩৫ বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান। আধুনিক যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হয়েছে। ৫ম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমান আধুনিক যুদ্ধের কথা মাথায় রেখে এ বিমান তৈরি করা হয়েছে। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের তিনটি মডেল রয়েছে। এফ-৩৫এ কনভেনশন টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং(সিটিওএল), এফ-৩৫বি শর্ট টেকঅফ এন্ড ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং(এসটিওভিএল) এবং এফ-৩৫সি ক্যাটাপল্ট অ্যাসিস্টেড টেকঅফ বাট অ্যারেস্টেড রিকভারি। সম্প্রতি
ইসরাইল আমেরিকার তৈরি করা আরো ১৭টি স্টিলথ এফ-৩৫ জঙ্গিবিমান কেনার চুক্তি করেছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। ৫০টি এফ-৩৫ বিমান কেনার বৃহত্তর চুক্তির আওতায় নতুন চুক্তি করা হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ১৭টি বিমান ইসরাইলে পৌঁছাবে। ইসরাইলি বিমান বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বহরকে পাল্টে সেখানে এফ-৩৫ বিমান নেয়া হবে। ইসরাইলের
সক্ষমতাকে তুঙ্গে রাখার পরিকল্পনা থেকে এসব বিমান কেনা হচ্ছে বলে জানায় ইসরাইলি কর্মকর্তারা। অবশ্য এফ-৩৫ বিমানের দাম নিয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়। তবে এই প্রথমবারের মতো প্রতিটি বিমানের দাম ১০ কোটি ডলারের নিচে নেমে এসেছে বলে জানা যায়। এতে এফ-৩৫ বিমানের বহর দুই স্কোয়াড্রনের বদলে তিন স্কোয়াড্রন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। ২০১১ সালে ওয়াশিংটন-তেলআবিব একটি সমঝোতাপত্র সই করেছিল। এতে ইসরাইলকে ৭৫টি এফ-৩৫ বিমান কেনার প্রকাশ্য অনুমতি দিয়েছিল মার্কিন সরকার। বর্তমানে
ইসরাইলের কাছে পাঁচটি এফ-৩৫টি বিমান রয়েছে। ইসরাইলের বিমান বাহিনীতে এসব বিমানকে যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ পাঁচটি বিমান যুক্ত হতে পারে। ২০১৭ সালের মে মাসে একটি এফ-৩৫ ইসরাইলের হাতে এসে পৌঁছেছে। হিব্রু ভাষায় এর নাম দেয়া হয় ‘আদির’। ইংরেজিতে যার অর্থ হলো ‘মাইটি ওয়ান’। ধারণা করা হচ্ছে ২০২০ সালের মধ্যে আমেরিকা বাকী এফ-৩৫ ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করে দিবে। ইসরাইল
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইল কমপক্ষে ৭৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান পরিকল্পনা করছে। রোবোটিক্স অস্ত্রের নতুন বিভাগের একটি অংশ হলো ‘দ্য গার্ডিয়াম’। যা ‘আনম্যানড গ্রাউন্ড ভেইকেলস’ অথবা ‘ইউজিভি’ নামে পরিচিত। ইতিমধ্যে,
এই ‘ইউজিভি’ ইসরাইল-সিরিয়ার দক্ষিণ সীমান্তে এবং গাজার দক্ষিণে মোতায়েন করেছে ইসরাইল। ‘ইউজিভি’ মূলত ‘ডিউন বাগি’ যানগুলোর মতো দেখতে। যা সেন্সর, ক্যামেরা এবং অস্ত্রসামগ্রী দিয়ে সজ্জিত। ‘ইউজিভি’ চাইলে সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। চাইলে হয়ে যেতে পারে সম্পূর্ণভাবে স্বশাসিত। এধরনের
রোবট যান যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যের ঝুঁকি কমায়। যেখানে সৈন্যদের বিরতির প্রয়োজন পড়ে, দরকার হয় খাবার এবং পানির। সেখানে ‘গার্ডিয়াম’-এর প্রয়োজন ট্যাংক ভর্তি গ্যাস। আর কিছুই না। শত্রু পক্ষ যদি টানেল করে আক্রমণ করে অথবা সমুদ্র পথ দিয়ে হামলা চালায়; সেই ক্ষেত্রেও ‘গার্ডিয়াম’ শত্রুদের আক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। ১৯৮০ সালে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান যুদ্ধের ময়দানে ‘অ্যারো’ ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলেন। সেই সাথে সোভিয়েতের পরমাণু মিসাইলকে প্রতিরোধের জন্য ‘অ্যারো অ্যান্টি-মিসাইল প্রোগ্রাম’ তৈরিতে অন্য দেশের সাহায্যও চেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০০ সালে ইসরাইলের বিমান বাহিনী প্রথম এই ‘অ্যারো অ্যান্টি-মিসাইল প্রোগ্রাম’ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে এনেছে। এই অ্যারো অ্যান্টি মিসাইলের বিশেষত্ব হলো এটি প্রতিপক্ষের মিসাইলকে নাকচ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ‘দি অ্যারো’ প্রকল্পটি ইসরাইলের জন্য একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ আকারের দিক থেকে ইসরাইল খুব বেশি বড় নয়। তাই তাদের প্রতিটি অঞ্চলেই ব্যালিস্টিক মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ইসরাইলকে। কিন্তু ১৯৯১ সালে প্রথম ‘গালফ যুদ্ধের’ পর এ প্রকল্পের জন্য বড় তহবিল গঠন করতে সক্ষম হয় ইসরাইল। বর্তমানে ইসরাইলের কাছে ‘অ্যারো’ সিরিজ আছে যার তহবিল আংশিকভাবে আমেরিকার কাছ থেকে এসেছে। বিশ্বের
অন্য দেশও আজ মিসাইল প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার চিন্তা করছে। কিন্তু কোনো দেশ এখন পর্যন্ত ইসরাইলের সমতুল্য হতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে ইসরাইল মহাকাশে তাদের প্রথম কৃত্রিম গুপ্তচর উপগ্রহ পাঠায়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ৮টি দেশ মহাকাশে স্বাধীন কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে সফল হয়েছে। যার মধ্যে ইসরাইল একটি। ঘটনাটি ৩০ বছর আগের। অনেক দেশেই ইসরাইলের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতো। ইসরাইল যে কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি, উন্নয়ন এবং চালু করতে পারবে সেই কথাও কেউ বিশ্বাস করতে চাইতো না। কিন্তু এখন ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়েছে। সেই সাথে আটটি গুপ্তচর উপগ্রহও পরিচালনা করছে। বড় কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির থেকে ইসরাইল ‘ছোট উপগ্রহ’ নির্মাণেই বেশি জোর দিয়েছে। সে কারণেই যে জায়গায় আমেরিকা ২৫ টনের উপগ্রহ মহাকাশে প্রেরণ করেছে, ইসরাইলের উপগ্রহ মাত্র ৩০০ কিলোগ্রাম। ইসরাইলের
গুপ্তচর উপগ্রহ দুই ভাগে বিভক্ত। একধরনের উপগ্রহ রয়েছে যা অত্যাধুনিক রেজোল্যুশন ক্যামেরা সম্পন্ন। যা ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ছোট বস্তুকে শত মাইল দূর থেকেও শনাক্ত করতে পারে। আরেকটি
উপগ্রহ হলো ‘টেকসার’। এটি মূলক রাডারের মতো। যার হাই-রেজোল্যুশন সাধারণ ক্যামেরাগুলোর মতোই। কিন্তু সাধারণ ক্যামেরা মেঘ অথবা কুয়াশায় ঠিক মতো কাজ না করলেও ‘টেকসার’ সব ধরনের আবহাওয়াতেই কাজ করতে সক্ষম। কৃত্রিম
উপগ্রহ তৈরি করেই ইসরাইল প্রথমে পুরো বিশ্বের নজর কারে। ২০০৫ সালে ফ্রান্স যৌথভাবে উপগ্রহ নির্মাণের লক্ষ্যে ইসরাইলের সাথে অংশীদারি চুক্তিতে নিবন্ধিত হয়। ২০১২ সালে ইতালি ইসরাইলের কাছ থেকে পরিদর্শনকরণ উপগ্রহ তৈরি করিয়ে নেয়। যেটা তৈরিতে মোট ব্যয় হয় ১৮২ মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও, সিঙ্গাপুর এবং ইন্ডিয়াও ইসরাইলকে কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের কাজ দেয়। ‘দ্য হিরোন টিপি’ ইসরাইলের সবচেয়ে বড় জনহীন বায়বীয় বাহন। যার পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য ৮৫ ফুট। এটি আকাশে ২৪ ঘণ্টা উড়তে পারে এবং ১টন ভার বহন করতে পারে। ‘দ্য হিরোন টিপি’ এতোটাই শক্তিশালী যে তা মিসাইল নিক্ষেপেরও ক্ষমতা রাখে। এমন তথ্যই উঠে এসেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা রিপোর্টে। কিন্তু মিসাইল নিক্ষেপের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি ইসরাইল। ১৯৬৯ সালে ইসরাইলে প্রথম ড্রোনের ব্যবহার হয়। সেই সময় ইসরাইল সামরিক বাহিনী খেলনা বিমানের মধ্যে ক্যামেরা লাগিয়ে সুয়েজ খালের ওপর দিয়ে মিশরের দিকে নজর রাখতো। ১৯৮২ সালের দিকে ইসরাইল তাদের প্রথম যুদ্ধ ড্রোন আকাশে উড়ায়। যার নাম দেয় ‘স্কাউট’। লেবাননে এটির ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে সিরিয়ার ‘অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল সিস্টেম’-এর দিকে নজর রাখে ইসরাইল। ১৯৮৬ সালে ইসরাইল আমেরিকান নৌ-বাহিনীর কাছে প্রথম ড্রোন সরবরাহ করে। যার নাম ছিলো ‘পাইয়োনিয়ার’। এর কয়েক বছর পরেই ‘পাইয়োনিয়ার’ সিরিজের ড্রোন ইতিহাস সৃষ্টি করে। প্রথম গালফ যুদ্ধে ইরাকি সৈন্যরা ইসরাইলের ড্রোনের কাছেই সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণ করে। রোবোটের কাছে আত্মসমর্পণের ঘটনা ইতিহাসে সেটিই ছিলো প্রথম। সামরিক
বাহিনীদের হামলার পূর্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ড্রোনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এতে বেসামিরকদের মৃত্যুর আশঙ্কা কমায় বলে দাবি করে ইসরাইলিরা। এখন পর্যন্ত ‘মারকাভা ট্যাঙ্ক’ হলো ইসরাইলের সবচেয়ে গোপনীয় প্রকল্প । ‘মারকাভা ট্যাঙ্ক’-কে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক এবং নিরাপদ ট্যাঙ্ক বলা হয়। মারকাভা সিরিজের নতুন মডেল ‘মারকাভা এমকে-৪’ বেশ উন্নত। এমনকি সময়ের চেয়েও এগিয়ে। আজ ইসরাইলকে ট্যাঙ্ক নির্মাণের দিক থেকে এতো শক্তিশালী করে তোলার পেছনে ব্রিটেনসহ আরো কিছু দেশ দায়ী। কারণ তারা প্রথম ইসরাইলের কাছে ট্যাঙ্ক বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই ১৯৭০ সালে ইসরাইল নিজেই ট্যাঙ্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলাফল, ইসরাইলের কাছে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক রয়েছে। যা তাদের নিজেদের তৈরি। কোনো জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজের ওপর। ইসরাইল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞের মতে, “ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এবং অস্ত্র সামগ্রী বর্তমান থেকে বহুবছর এগিয়ে। আমরা সাধারণত সাইন্স ফিকশন সিনেমাতে যেসব অত্যাধুনিক বা যুগের থেকে এগিয়ে থাকা অস্ত্র সামগ্রী, ড্রোন বা ট্যাঙ্ক দেখি তা বাস্তবেই ইসরাইলের কোষাগারে রয়েছে। যা সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের সামনে তুলে আনবে ইসরাইল।” অনেকগুলো কারণেই ইসরাইলের মিলিটারি প্রযুক্তি বিখ্যাত। ইসরাইলের রিভলভার, বর্মাচ্ছাদিত যুদ্ধযান (ট্যাঙ্ক, ট্যাঙ্ক-কনভার্টার এপিসি, বর্মাচ্ছাদিত বুলডোজার ইত্যাদি), মানুষ্যবিহীন বায়বীয় যান ও রকেট্রি (মিসাইল ও রকেট) ইত্যাদি মারণাস্ত্র বিশ্বখ্যাত। ইসরাইল বিশ্বের একমাত্র দেশ যার রয়েছে অপারেশনাল এন্টি-ব্যালস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। এছাড়া ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে মধ্যম রেঞ্জের রকেট বিধ্বংসের জন্য উচ্চ প্রযুক্তির লেজার সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। এর নাম দেয়া হয়েছে নটিলাস বা টিএইচইএল। মহাকাশে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসরাইলের স্বাধীন পরিদর্শন ক্ষমতা রয়েছে। এসব কারণেই জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম একটি দেশ হয়েও গোটা বিশ্বব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে ইসরাইল।