উপকূলীয় এলাকার অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য-নিরাপত্তা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা হাসির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শওকত রেজা।
* আপনাদের এনজিওর কার্যক্রম কী ধরনের?
** উপকূলীয় এলাকার দরিদ্র নারী-পুরুষের উন্নয়নে পরিচিত একটি নাম জাগো নারী। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার আদায় এবং উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কয়েকজন সমমনা নারীর সৃজনশীল চিন্তা থেকেই জাগো নারীর যাত্রা শুরু। বছরের ডিসেম্বরেই সংস্থাটি মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয় এবং পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়। জাগো নারী বিশ্বাস করে, বেঁচে থাকার জন্য নারী পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে এবং এটা বাস্তবায়ন করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি করা প্রয়োজন। গ্রাম শহর পর্যায়ের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্রত নিয়েই জাগো নারীর যাত্রা।
* দারিদ্র্য বিমোচনে আপনার সংগঠন কী ধরনের ভূমিক রাখছে?
** বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত উপকূলবর্তী জেলা বরগুনা। নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অঞ্চলের অধিবাসীদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে তারা। জরুরি মুহূর্তে এসব দুর্যোগপীড়িত দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় উপকারভোগীরা  আর্থিক ইনপুট সাপোর্ট পেয়ে বিভিন্ন  আয়বর্ধক কাজের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। ফলে তাদের জীবন মানের উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রম অঞ্চলে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
* বর্তমানে জাগো নারী কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করছে?
** দাতা সংস্থা সিডা আগাখান ফাউন্ডেশনের আর্থিক এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কারিগরি সহায়তায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক ইসিডিএসপি-বি (আরলি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম-বাংলাদেশ) প্রকল্প কাজ চলছে। প্রকল্পটি ২০০৯ সাল থেকে চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০০ শিশু এবং ১৬০০ গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
* ডিএফআইডি, ইকো অক্সফামের সহায়তায় মহাসেন দুর্গতদের খাদ্য-নিরাপত্তা জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বরগুনা সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে। দুটি প্রকল্পের অধীনে হাজার ৫০০ পরিবার সুবিধা পাবেন। প্রতি উপকারভোগী ক্যাশ ফর ওয়ার্ক, ক্যাশ ফর ট্রেনিং কৃষি সরঞ্জামাদি (সার, শীতকালীন সবজি বীজ, কোদাল) বাবদ ১০ হাজার টাকা করে পাবেন।
* অক্সফাম সিড়ির আর্থিক সহায়তায় বরগুনা সদর বেতাগী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২০১০ সাল থেকে রি-কল প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে হাজার ৫০০ হতদরিদ্র পরিবার গরু, ছাগল, হাঁস, মাছ ধরার জাল নৌকা, রিকশা, ভ্যান, সেলাই মেশিন, পানের বরজ, মাছ চাষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য আর্থিক অনুদান ইত্যাদি সহায়তা পেয়েছে। ফলে এলাকার দরিদ্র নারীরা আয়বর্ধকমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এছাড়াও ৮০টি সিবিও এর ২৪ হাজার পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে (যেমন দুর্যোগ এর পূর্বপ্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন করণীয়, দুর্যোগের পরবর্তী করণীয়) সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে, নিজেদের দুর্যোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে এবং নারীর আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
*প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাগো নারী অধিকারভিত্তিক কাজ করে আসছে। সংগঠনটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বর্তমানে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী শিশু স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ইস্যুতে কাজ করছে। এছাড়াও সংস্থাটি বিশেষ করে যৌতুক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং নারী নির্যাতন বিষয়ে অ্যাডভোকেসি কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থার মধ্যে অক্সফাম, সিডা, আগাখান ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, নারী পক্ষসহ বিভিন্ন দেশীয় দাতা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে।
বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি জাগো নারী একাধিক নেটওয়ার্কের সদস্য সংগঠন হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছে। এসব নেটওয়ার্কের মধ্যে সুপ্র (সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান), সিএসআরএল, বিসিএনএফ, দুর্বার, পাওয়ার, সাউদার্ন এনজিও নেটওয়ার্ক অ্যাডাব অন্যতম।
* আয়বৃদ্ধির জন্য আপনার সংগঠনের কী কী কর্মসূচি রয়েছে?
** সংস্থার নিজস্ব তহবিল গঠনের জন্য পাঠশালা নামে একটি প্রশিক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র চালু আছে। এখানে প্রশিক্ষণ ভেন্যু প্রশিক্ষণার্থীদের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এবং স্থানীয় ভাবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
* আপনাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
** একটি হিউম্যানিটেরিয়ান অর্গানাইজেশন হিসেবে প্রান্তিক মানুষের জীবন মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু দাতা সংস্থার ওপর নির্ভরশীল না থেকে সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে। কমিউনিটি পর্যায়ে মাতৃ শিশু স্বাস্থ্য সেবা, স্যানিটেশন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে।
- সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন শওকত রেজা ডিসেম্বর , ২০১৩
 
Top