আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা সদরে মৌসুমী
ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। এসব ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে
জানা গেছে, রোজার ১৫ দিনের পর থেকেই এই বৃত্তিতে প্রতি বছর আসছে। ঈদের
দু'তিন দিনের মধ্যে প্রায় ২ মন চাল, ৫ হাজার নগদ টাকা, দু'টি শাড়ী/লুঙ্গি
আয় করে ঘরে ফিরে যায়। রমজানে উপজেলা সদরে এ ধরনের ভিক্ষুকের সংখ্যাই
সবচেয়ে বেশি। ঈদ সামনে রেখে উপজেলার চর শাহজালাল, চর বোরহান, চর ঘুনি,
পাতার চর, লক্ষ্মীপুর, আলীপুর, জাফরাবাদ, নিজহাওলা, আদমপুর, গোলখালী,
গছানী, ঢনঢনিয়া, চরহোসনাবাদ, দক্ষিণ দাসপাড়া, বগুড়া, আমতলা গ্রাম থেকে
নিত্যদিনই আসছে ভিক্ষুক। প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে
যাচ্ছে। এদিকে, ঈদ আনন্দ প্রণোদনায় ইউনিয়ন পরিষদে দেয়া ১০ কেজি চাল আনতে
সারা দিন লাইনে দাড়িয়ে অনেকে ফিরছে খালি হাতে। কেউ পেলেও ৫/৬কেজির বেশি
নয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা
দশমিনা উপজেলার শত ভাগ খানা ঈদ আনন্দ প্রণোদনার চাল বরাদ্দ পেয়েছে। প্রায়
শতকরা ৩০ ভাগ খানার কর্তারা এই চালের জন্য লাইনে দাড়ায় না। তবুও ইউপি
চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যর মাপে কম দেয়ার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা অতি
দরিদ্র মানুষগুলো। এদিকে চাল নিতে এসে দশমিনার সদরের ৮নং ওয়ার্ডের শংকর
আরিন্দার ছেলে তপন আরিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান এড. ইকবাল মাহমুদ লিটনের
পালিত ক্যাডারদের মারধরে প্রথমে দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এজন্যই লাইনে না
দাড়িয়ে ঈদের বাড়তি খরচ মেটাতে সচ্ছল পরিবারের দাড়ে ও উপজেলা সদরের
ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনে ভীড় করছেন বলে জানায় আলীপুরা এলাকা থেকে আসা
ভিক্ষুক আঃ জব্বার। উপজেলার নলখোলা বাজারে রাফিয়া খাতুন নামে এক
ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়ি জাফরাবাদ গ্রামে। হালিমা
বিবির বাড়ী দাবাড়ী, নদী ভাঙ্গন কবলিত চর ঘুনি থেকে এসেছে, ময়না, বকুল,
আম্বিয়া, রমিজা, হাতেম, রহমান, উত্তর বাঁশবাড়িয়া থেকে আসা আবুল, সোবাহানও
মৌসুমী ভিক্ষুক। এদের অনেকই মৌসুমী ভিক্ষাবৃত্তিতে ১২ থেকে ২৫ বছরের
অভিজ্ঞ। ঈদ সামনে রেখে দেড়-দু'মাসের খাবার ও ফেতড়ার কাপড় দিয়ে বছর পার
করাই এদের লক্ষ্য। ঈদ সামনে রেখে এমনিতেই মানুষের চাপ, তার উপর
ভিক্ষুকদের অযাচিত জ্বালাতনে অতিষ্ঠ উপজেলার বসতিরা। উপজেলা সমাজকল্যান
দপ্তরের বরাত দিয়ে এসব ভিক্ষুকরা জানায়, বিধবা, পঙ্গু, বয়স্ক ভাতায় নাম
লেখাতে টাকা লাগে। সাহায্য ছাড়াতেও টাকা লাগে। এরাতো সমাজের কল্যান করে
মানুষের নয়। এদিকে ভিক্ষুক উচ্ছেদে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহন করলেও
বাস্তবে সেটা কার্যকর হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। একাধিক
ভিক্ষুকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি দরিদ্রদের জন্য সরকারের দেয়া
সাহায্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিতরণ যন্ত্রের ভিক্ষুকরা খেয়ে ফেলছে। এজন্য
ভিক্ষা বৃত্তি থেকে বের হবার ইচ্ছা থাকলেও বের হতে পারছেনা। 
নিপুণ
চন্দ্র, nipunch@gmail.com

