পাল
সম্প্রদায়ের বিধবা নারী ও কিশোরী শিশুকন্যার ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় নারী ও শিশু
নির্যাতন আইনে মামলা নেয়নি কটিয়াদি মডেল থানার ওসি। অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তরা রাজনৈতিক
প্রভাবের কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার পরিবর্তে এ মামলা নেয় পুলিশ।
আসামিপক্ষে
পুলিশের কী পরিমাণ আনুগত্য ও দুর্বলতা থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে- এসব আলোচনা-সমালোচনাই
এখন 'টক অব দ্য কিশোরগঞ্জ'।
আর
এমন ঘটনা জানতে শনিবার কিশোরগঞ্জ আসছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
মহাসচিব অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি
বিশেষ প্রতিনিধিদল।
কিশোরগঞ্জের
কটিয়াদি উপজেলার বনগ্রামে বাড়িতে আটকে রেখে এক ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী পরিবারের বাবা-চাচা
ও ছেলে কর্তৃক ওই পাশবিক নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর-আলোচিত ঘটনাকে মারামারির ঘটনা দেখিয়ে
মামলা নিয়েছে পুলিশ।
তাও
ঘটনার পাঁচ দিন পর ওই থানা থেকে অভিযুক্ত বের হওয়ার সময় র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি
দল তাদের মধ্যে অন্যতম নির্যাতনকারী যুবলীগ নেতা সুমনকে আটক করে হস্তান্তরের পর তড়িঘড়ি
করে এ মারামারির মামলা রুজু করে দায়মুক্ত হয় কটিয়াদি মডেল থানা পুলিশ। এ কারণে গ্রেতারের
দু'দিনের মধ্যেই জামিনে সদম্ভে বেরিয়ে আসে নির্যাতনকারী ওই যুবলীগ নেতা।
একই
সঙ্গে এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ নজিরবিহীন ঘটনায় প্রতিবাদ- ক্ষোভ, নিন্দা
ও ঘৃণার ঝড় তুলে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করছে।
প্রসঙ্গত,
প্রায় চৌদ্দ বছর আগে জেলার কটিয়াদি উপজেলার বনগ্রামের সন্তানসম্ভবা ওই নারীকে রেখে
দরিদ্র স্বামী মারা যান। তারপর কন্যাসন্তানের জন্ম হলে তাকে লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষিত
করে গড়ে তুলতে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তার মাটিকাটার কাজের পাশাপাশি মানুষের বাড়িতে
গৃহপরিচারিকার কাজ নেন। সম্প্রতি ধলু মিয়া নামে গ্রামের প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তির
বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ দিয়ে আশ্রয়দাতা সাজেন।
অভিযোগে
রয়েছে, আশ্রিতার ওপর কুদৃষ্টি দিয়ে আশ্রয়দাতা ধনু মিয়া ও তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক ছেলু মিয়া তাকে এবং ধলু মিয়ার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক
সুমন মিয়া তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করেন।
আর
এসব ঘটনা বলে দেয়ার কথা বললে তাকে কয়েক দিন বাড়িতে আটকে রাখে।
গত
১৫ জুন শুক্রবার তাদের সম্প্রদায়ের এক প্রতিবেশী কটিয়াদি মডেল থানার ওসিকে জানালে রাত
২টার সময় ওই বিধবা নারীকে গুরুতর আহতাবস্থায় এনে কটিয়াদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
ভর্তি করে। এ সময় ওই নারী তাদের ওপর পাশবিক ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা পুলিশের কাছে
খুলে বললেও তাকে শুধুমাত্র ফিজিক্যাল অ্যাসল্টের রোগী হিসাবে ভর্তি করায়।
এ
সুযোগে ওই ধনাঢ্য পরিবারটি রাজনৈতিক প্রভাব আর অর্থের দাপট কাজে লাগিয়ে পাশবিক নির্যাতনের
ঘটনা আড়ালের তৎপরতায় লিপ্ত হয়। এ কারণে ওই নারীর স্বজনরা থানায় ধরনা দিয়ে ঘটনার পাঁচ
দিন পরও মামলা করতে পারছিলেন না।
অবশেষে
যুগান্তর এবং যমুনা টিভি এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করলে র্যাব -১৪ ভৈরব ক্যাম্পের একটি
দল বুধবার রাত ১০টার দিকে কটিয়াদি মডেল থানা থেকে বের হয়ে আসার পথে প্রধান অভিযুক্ত
যুবলীগ নেতা সুমনকে আটক করে হস্তান্তরের পর কটিয়াদি মডেল থানা পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ
ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ছেলু মিয়ার নাম বাদ দিয়ে শুধু শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ
দিতে বাধ্য করে।
অবশ্য,
যোগাযোগ করা হলে কটিয়াদি মডেল থানার ওসি মো. জাকির রাব্বানী দাবি করেন,তাদের ইচ্ছামতো
দেয়া অভিযোগেই মামলা হয়েছে। তবে এ মামলা মারামারির আইনে।
এ
ব্যাপারে কথা হলে কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক জানান, নারীর
স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ এবং আঘাত হচ্ছে পাশবিক নির্যাতন। এমন সব নির্যাতনের ক্ষেত্রে
অবশ্যই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা নেয়া বাধ্যতামূলক।
সূত্র:
দৈনিক যুগান্তর