নারীর
রূপের আগুনে পুরুষরা কীভাবে জ্বলে, তার যেন আরও এক প্রমাণ মিলল। এমনীতে
রমণীর রূপ-গুণে পুরুষদের চরিত্রের স্খলতার উদাহারণ আদি-অনন্তকালের। খোদ
বিশ্বামিত্র মুনির ধ্যান ভাঙিয়েছিলেন মেনকা। এমনকী,
সীতার রূপে-গুণে নিজের লঙ্কাকেই ধ্বংস করেছিলেন রাবণ।
দেবরাজ
ইন্দ্রও কম যাননি। তিনিও
পরস্ত্রীকে হরণ করেছিলেন। মেজর
নিখিল রায় হন্ডা এই দলের কলিযুগের নবীন সংযোজন বলা যেতে পারে। তবে,
হন্ডার সঙ্গে উপরের পৌরাণিক চরিত্রগুলির একটা জায়গাতেই পার্থক্য এরা তাঁদের প্রেয়সীর কখনও প্রাণ কাড়ার চেষ্টা করেননি।
সুন্দরী
শৈলজা দ্বিবেদীকে সেনাবাহিনীর মেজর নিখিল রায় হন্ডার পাগলামো কোন পর্যায়ে ছিল সে তথ্য সামনে আসার পর সকলেরই চক্ষু চড়কগাছে। শৈলজার
স্বামী সেনাবাহিনীর মেজর অমিত দ্বিবেদীর সঙ্গে যে নিখিলের পূর্ব পরিচয় ছিল এমনটা কখনও নয়। পুলিশের
দাবি ২০১৭-সালে মিসেস আর্থ সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছনো বছর ৩০-এর শৈলজা রূপে মন হারিয়েছিল নিখিল।
সোশ্যাল
মিডিয়ায় আসক্ত নিখিলের সামাজিক জীবনে গুটি কয়েক বন্ধু ছিল। সারাক্ষণ
ফেসবুকেই মেতে থাকত নিখিল। ফেসবুকে
সুন্দরী মহিলাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো ছিল তার অন্য়তম পছন্দের। ২০১৫
সালে একদিন এভাবেই এক বন্ধুর প্রোফাইলে সুন্দরী শৈলজার ছবি দেখতে পেয়েছিল নিখিল। স্লিম-ট্রিম ফিগারের সুন্দরী শৈলজাতে মন বসতে দেরি হয়নি সেনাবাহিনীর মেজরের। নিখিল
জানতে পেরেছিল শৈলজা নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরেই আর্মি বেসের কোয়ার্টারে রয়েছেন। কারণ
শৈলজার স্বামী অমিত দ্বিবেদী-ও একজন মেজর।
এরপর
এক কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে অমিতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে নিখিল। আস্তে
অমিতের সঙ্গে বন্ধুত্বের গাঢ়তা বাড়াতে থাকে সে। অমিতের
সূত্র ধরেই শৈলাজার সঙ্গে পরিচয়ের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় নিখিল। পুলিশের
আরও দাবি, অমিতের থেকে আস্তে আস্তে শৈলজার সঙ্গে ঘন-ঘন দেখা করতে শুরু করেছিল সে। ২০১৬
থেকে শৈলজার সঙ্গে পাকাপাকি সম্পর্কে জড়ায় নিখিল।
নিখিলের
পাগলোমা এতটাই চরমে ছিল যে জানুয়ারি মাস থেকে কিছু দিন আগে পর্যন্ত শৈলজাকে সে ৩,৩০০ বার ফোন করেছিল। এমনকী,
১,৫০০ এসএমএসও পাঠায়। শৈলজার
সঙ্গে নিখিলের পরকিয়া বুঝতে পেরেছিল অমিতও। একদিন
নিখিলের সঙ্গে অশ্লীল ভিডিও কলিং-এর সময় শৈলজাকে দেখেও ফেলেছিলেন তিনি। এই
নিয়ে শৈলজা ও নিখিলকে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। এই
পরিস্থিতিতেই ডিমাপুর থেকে দিল্লিতে বদলি হয়ে চলে এসেছিলেন অমিত।
পুলিশি
তদন্তে জানা গিয়েছে, শৈলজাকে নিয়ে নিখিলের খ্যাপামো মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যে
কোনও মূল্যে সে শৈলজাকে বিয়ে করার পণ করে বসেছিল। দিল্লিতে
চলে আসার পর শৈলজাও নিখিলকে এড়িয়ে এড়িয়ে চলতে থাকেন।
নিখিল
এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছিল না। সেও
শৈলজার সঙ্গে একটা হেস্ত-নেস্ত করতেই দিল্লি পৌঁছেছিলো বলে পুলিশ সূত্রে খবর। শৈলজাকে
খুনের আগের রাতে স্ত্রী-র সঙ্গে প্রবল ঝগড়াও হয় নিখিলের। শৈলজার
গাড়ির চালকের বয়ান অনুযায়ী, ২৩ তারিখে আর্মি হাসপাতালে তিনি শৈলজা নিয়ে যান ফিজিও থেরাপির জন্য। কিন্তু,
এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন শৈলজা। পরে
জানা যায় শৈলজা ফিজিও থেরাপির কেবিনে যাননি। এদিকে,
হাসপাতাল থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশি
তদন্তে দেখা যায় মৃতদেহটি শৈলজার। পুলিশি
তদন্তে সামনে আসে গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়ার আগে শৈলজার গলার নলি কাটা হয়েছিল।
শৈলজার
স্বামী অমিতের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই এরপর নিখিলকে ধরা হয়। প্রথমে
সব অস্বীকার করলেও নিখিলের গাড়ি থেকে শৈলজার চুল এবং রক্তের দাগ মেলে। ফরেনসিক
পরীক্ষার পরই গ্রেফতার করা হয় নিখিলকে। পুলিশের
দাবি, নিখিল খুনের কথা স্বীকার করেছে। বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে শৈলজার সঙ্গে ২৩ তারিখ দেখা করেছিল লিখিল। হাসপাতাল
থেকেই শৈলজাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিল সে। শৈলজা
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এরপরই নিখিল খুন করে। শৈলজার
গলার নলি কেটে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর
দুর্ঘটনা বোঝাতে শৈলজার দেহের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
নিখিল
প্রমাণ লোপাট করতে গাড়িকে ক্লিনিং সেন্টারেও দিয়েছিল। কিন্তু,
শেষরক্ষা হয়নি। গাড়িতে
থেকে উদ্ধার হওয়া মহিলার চুল ও রক্তের নমুনা শৈলজার বলে ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়। এরপরই
গ্রেফতার করা হয় মেজর নিখিলকে।