দশমিনা প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও ডা: মৃণাল কান্তি রায়ের ভুল চিকিৎসায় শিশু হত্যার অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গয়জুদ্দিন হাওলাদারের শিশু কন্যা শাহ-কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী লামিয়া পেটের ব্যাথা নিয়ে ২ জুন বিকালে দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। লামিয়ার চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মৃণাল কান্তি রায় এ্যাপেন্ডিস ব্যাথা হয়েছে এবং কয়েক ঘন্টায় অপারেশন করা না হলে পক্ষাঘাতের কথা জানায় রোগীর স্বজনদের। রোগীর খালু মো: জাহাঙ্গীর হোসেনর মধ্যস্থতায় ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে ৩ জুন সকাল ৯টায় লামিয়ার এ্যাপেন্ডিসের অপারেশন করে ডা: মৃণাল কান্তি রায়। অপারেশন শেষে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ডা: মৃণাল কান্তি রায় বরিশাল বা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার কথা জানায় অপেক্ষারত স্বজনদের। ওই দিন মূমুর্ষ মোধাবী ছাত্রী লামিয়াকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরের দিন রাজধানী ঢাকার শ্যামলী শিশু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে রোগীর স্বজনরা। ওই হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় লামিয়ার মৃত্যু হয়। মেধাবী ছাত্রী লামিয়ার বাবা গয়জুদ্দিন হাওলাদার ও খালু মো: জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে এ প্রতিনিধিকে জানায়, লামিয়া গুরুত্বর রোগাক্রান্ত শুনে আমরা দিকবেদিক হারিয়ে ফেলি। ডা: মৃণাল কান্তি রায় লামিয়াকে দেখেই কোন পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া এ্যাপেন্ডিস রোগে আক্রান্ত বলে সনাক্ত করেন এবং অপারেশনের জন্য তারাহুরো করে প্রায় ১৫ ঘন্টার ব্যবধানে এ্যানেস্তেসিয়া বিহীন হাত-পা বেঁধে অপারেশন করেন। কিন্তু ঢাকার চিকিৎসকদের পরীক্ষানিরীক্ষায় লামিয়ার একটি কিডনী মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ্য ধরা পরে। কিডনী রোগীর এ্যাপেন্ডিস অপারেশন বিষয়টি মাত্র ৮ হাজার টাকার জন্য শিশু হত্যা ব্যাতিত আর কিছুই নয়। অপারেশন সময়ে অজ্ঞান না করে হাত-পা বাঁধায় লামিয়ার আর্তচিৎকারে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাতাস ভারি করে তোলার বিষয়টি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক ও অন্যান্য রোগীরা স্বীকার করেন। হাসপাতালের ওই চিকিৎসকরা আরও জানায়, হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার ও কোন সরঞ্জামাদি নেই। এছাড়াও শারিরীক পরীক্ষা করার জন্য ব্যাক্তি মালিকানাধীন রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোর এ ধরণের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নেই। ইউএইচএফপিও ডা: মৃণাল কান্তি রায় উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়ের ভগ্নিপতি হবার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহারে অধিক অর্থ লাভের আশায় পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া এভাবেই একের পর এক অপারেশন করে আসছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লামিয়ার সহপাঠী, শিক্ষক ও স্বজনরা শোকে বিভোর। ডা: মৃণাল কান্তি রায়ের ভুল চিকিৎসার শিকার লামিয়া মুত্যুতে বিচার চায় তারা। এদিকে অপমৃত্যুর ঘটনার পর থেকে ইউএইচএফপিও ডা: মৃণাল কান্তি রায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুপস্থিত রয়েছেন। ঘটনার বিষয় জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মৃণাল কান্তি রায়ের মোবাইল নম্বরে (০১৭১১৩৮৭৬২৮) একাধিক বার কল ও এসএমএস পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে, বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল কালাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গৌতম চন্দ্র রায়সহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী পাহারায় গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় লামিয়ার দাফন কাজ সম্পন্ন করায়। এ ঘটনায় উপজেলার সর্বমহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।