ঢাকার পাশেই মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের
কাকালদি গ্রামে খুন হলেন লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাঁকে গুলি করে খুন করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
বাচ্চু বাংলাদেশের বিশাখা প্রকাশনীর কর্ণধার ছিলেন। ফেসবুক ও ব্লগে সোচ্চার ছিলেন ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। মুক্তমনা লেখক হিসেবে পরিচিত শাহজাহান বাচ্চু মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ
দিন সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যাপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদি গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে তাঁর বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরে দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে। স্থানীয় মানুষ অচেতন অবস্থায় বাচ্চুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসক দুলাল আহম্মেদ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই শাহজাহান বাচ্চুর মৃত্যু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান
সংবাদমাধ্যমের কাছে জানান, বাচ্চুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সিরাজদিখান থানার সহকারী উপপরিদর্শক
(এএসআই) মাসুম আহমেদ জানান, ঘটনার সময়ে তিন রাস্তার মোড়ে আনোয়ার হোসেনের ফার্মেসির সামনে বসে কথা বলছিলেন শাহজাহান বাচ্চু। দু’টি মোটরসাইকেলে
চার জন দুষ্কৃতী এসে তাঁকে টানতে টানতে সামনের রাস্তায় নিয়ে যায়। তার পরই বাচ্চুকে গুলি করে। তাঁর বুকের ডান পাশে একটি গুলি লাগে। এর পরই দুষ্কৃতীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তিনি আনন্দবাজারকে
জানান, ঘটনার সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে থানার দিকে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় ইফতারের কিছুক্ষণ আগে শ্রীনগর সড়কের তিন রাস্তার মোড়ের একটু আগে তিনি একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পান। সামনে গিয়ে দেখেন এক ব্যক্তি রাস্তায় পড়ে আছেন। তাঁর কাছে এগিয়ে যেতেই রাস্তার পাশ থেকে তাঁকে উদ্দেশ করে কেউ বলে, ‘ওকে গুলি কর’। তাঁকে লক্ষ্য করে একটি বোমাও ছোড়া হয়।
সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আনন্দবাজারকে বলেন, কে বা কারা কী কারণে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করেছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। পুলিশ তদন্ত করছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম পিপিএম আনন্দবাজারকে বলেন, “কারা ওই লেখককে খুন করেছে তা এখনও আমরা জানতে পারিনি। মোটরসাইকেলে
চেপে দুষ্কৃতীরা এসেছিল। তবে এটা জঙ্গি হামলা নয় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।” এ দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য এর মধ্যেই একটি দল মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছে।
এ দিকে এই ঘটনার একটু পরে বাচ্চুর মেয়ে দূর্বা জাহান ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, “আমার বাবা শাহজাহান বাচ্চুকে কারা যেন গুলি করে মেরে ফেলেছে।”
মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হামিদা খানম জানান, শাহজাহান বাচ্চু জেলা কমিউনিস্ট পার্টির আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি একজন মুক্তমনা মানুষ ছিলেন।
শাহজাহান বাচ্চু ঢাকার বাংলাবাজার এলাকার বিশাখা প্রকাশনীর মালিক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি এক জন সাংবাদিক, কবি, ব্লগার, সংগঠক, ঢাকার বাংলাবাজারে
বিশাখা প্রকাশনীর সত্বাধিকারী ও সাপ্তাহিক আমাদের বিক্রমপুর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন।