দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
আলেয়া বিবির বাড়ি দশমিনা উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের যৌতা গ্রামে। ২২ বছর আগে থেকে দিন মজুর স্বামী মোশারেফ খলিফা ও সন্তানসহ কষ্টে কাটছিল আলেয়া বিবির। প্রতিবেশীদের বাড়ীতে কাজ করে সন্তান সাবিনা, সজল ও শারমিনদের একবেলা-দু’বেলা খাওয়াতে হয়েছে। বড় ও মেঝ সন্তান শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে না পারলেও সরকারের উপবৃত্তি সুবিধা পেয়ে শারমিন আজ ৮ম শ্রেণি পড়–য়া। মোশারেফের মরহুম বাবা আজাহার খলিফা থেকে প্রাপ্ত স্থানীয় ৩ কড়া জমিতে খুপড়ি ঘর করে একঘুগের বর্ষা মৌসুমের দিনগুলি গুনে পার করেছে। স্বপ্ন ছিল ওই জমিতে একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরায় যার দশা, তার আবার স্বপ্ন পূরণ? স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসলো বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবার জন্য বাসস্থান প্রতিশ্রুতি ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় নাম দিয়ে দেন সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ¦ আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২৯৭ বর্গ ফুটের সেমিপাকা ঘর পায় আলেয়া। আলেয়া-মোশারেফ দম্পত্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে দেয়া মিলাদ দিয়ে নব-নির্মিত গৃহে প্রবেশ করেছেন বলেও এ প্রতিবেদককে জানান।
তিন সন্তানের জননী ডালিম বিবি। একই এলাকার মরহুম ছত্তার প্যাদার ছেলে দিনমজুর মোঃ আলমগীর প্যাদার সাথে বিয়ের পর অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। এরই মধ্যে আশিক (১৪), ইয়ামিন (১০) ও ইয়াসিন (৭) জন্ম নেয় ডালিম-আলমগীর দম্পত্তির ঘরে। স্থানীয় ৪ কড়া মাপের নিচু জমিতে খড়ের ঘরে কাটিয়ে দিয়েছেন সংসার জীবন। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রবন উপকূলীয় অঞ্চল রনগোপালদী ইউনিয়নে বসবাস এদের। ঝড় হলেই অশংকা এইবুঝি কুড়ে ঘর গেল উড়ে। সিডর, নার্গিস, আইলা, মহোসেন, কোমেন কোন ঝড়ই ক্ষমা করেনি ডালিমদের। ঘর ভাঙ্গা আর ঘর গড়া ডালিমদে নিয়তি। সৃষ্টিকর্তাকে ডেকেছেন ঝড়ে রক্ষা পাবার জন্য, ঘর না ভাঙ্গার জন্য। কিছু ভাল খুঁটি দিয়ে একটি শক্তপোক্ত ঘর তাদের আজন্ম চাওয়া। ডালিম-আলমগীর দম্পত্তিও স্থানীয় সংসদ সদস্যর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সেমিপাকা ঘর পেয়ে মহাখুশি। ডালিম এমপি ও শেখ হাসিনাকে নামজ পড়ে দোয়া করেছেন।
যৌতার সোহেল, চরবোরহানের প্রতিবন্ধী সাজেদা, বেতাগীর অনীল, চর ঘুনির ঈমাম সিকদার, পূর্ব আলীপুরার জেলে আল-আমিন, বাঁশবাড়িয়ার স্বামী পরিত্যাক্তা সালমা, দশমিনার রিক্সাচালক শুক্কুর, খলিশাখালীর দিনমজুর জসিমসহ ৪৬৭টি পরিবার পাচ্ছেন এই সেমিপাকা ঘর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাস বলেন, এ পর্যন্ত ২৪০টি পরিবার নবনির্মিত সেমিপাকা ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। ৩০ জুনের মধ্যেই ৪৬৭টি পরিবার উন্নয়ন বান্ধব সরকারের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী ঘোষিত ঘর বসবাস উপযোগী করে তুলতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ নির্মাণ কাজ করছে।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, ’সবার জন্য বাসস্থান’ জাতীর জনক কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বস্তবায়নে আমরা ২০১০ সাল থেকে ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরেই ১৭ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আগামী দুই বছরে সারা দেশে ব্যাপক হারে এ কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলবে।