লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের পাশাপাশি রাশিয়া বিশ্বকাপে ঝড় উঠেছে আর একটি নাম নিয়েও। ভিডিয়ো অ্যাসিস্টান্ট রেফারি বা ভার। অ্যালান শিয়েরারের মতো প্রাক্তন ফুটবলার বলে দিয়েছেন, ভার স্রেফ আবর্জনা!
কিন্তু এমন অনেকে আছেন যাঁরা ভার-এর সমর্থনে মুখ খুলেছেন। আনন্দবাজারের সঙ্গে কথা বলার সময় ইংল্যান্ডের দুই প্রাক্তন ফুটবলার ওয়েসলি ব্রাউন এবং অ্যাশলে ওয়েস্টউড স্বাগত জানিয়েছেন এই প্রযুক্তিকে। একই কথা শোনা গিয়েছে স্পেনের প্রাক্তন বিশ্বকাপার ফের্নান্দো মোরিয়েন্তসের মুখেও।
![]() |
ক্রয় করুন http://www.bongshi.org থেকে |
কেন সমর্থন করছেন ফিফাকে? প্রশ্ন শুনে বৃহস্পতিবার ওয়েস্টউড বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় একটা ছোট্ট ভুল মানে অনেক স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া। অনেক লড়াই ব্যর্থ হয়ে যাওয়া। সেখানে যদি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভুল ঠেকানো যায়, তা হলে সমস্যা কোথায়?’’ ভুল যে কত মারাত্মক হতে পারে, তার একটা উদাহরণ দিচ্ছিলেন ওয়েস্টউড। বলছিলেন, ‘‘২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের গোলটা বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তখন যদি প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া যেত, তা হলে ম্যাচের চেহারাই হয়তো ঘুরে যেতে পারত।’’
ভার-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলছিলেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপার ব্রাউনও। দেখা যাচ্ছে, ভার ব্যবহার করলেও বিতর্ক এড়ানো যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে কতটা যুক্তিযুক্ত এই প্রযুক্তির ব্যবহার? আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে ব্রাউন বলেন, ‘‘ভার নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। মানছি, দু’একটা বিতর্ক হচ্ছে। পুরোপুরি নিখুঁতও নয় পদ্ধতিটা। যেমন প্রথম ম্যাচে আমার মনে হয়েছে, ইংল্যান্ড দু’টো পেনাল্টি পেতে পারত। কিন্তু সেটা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাও বলব প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে ফুটবলে। তা হলে ভুলের মাত্রাটা কমতে থাকবে।’’
স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা মরিয়েন্তেস মনে করেন, গোলের সংখ্যা বাড়াতে গেলে এই প্রযুক্তির প্রয়োজন আছে। আনন্দবাজারকে বলছিলেন, ‘‘ফুটবল খেলাটার আকর্ষণ বাড়াতে গেলে গোল চাই। আর সেখানেই ভার-এর প্রয়োজনীয়তা আছে। ভার ব্যবহার করে ফিফা ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।’’
ক্রিকেট বা টেনিসে খেলোয়াড়দের হাতেই রিভিউ চাওয়ার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু ফুটবলের ক্ষেত্রে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রেফারিকে। ব্যাপারটি কি ঠিক? সোনি টেন টু চ্যানেলের ফুটবল এক্সট্রার বিশেষজ্ঞ প্যানেলে থাকা ওয়েস্টউড মনে করেন, ফুটবলারদের হাতে আবেদন করার ক্ষমতা থাকলে ম্যাচের গতি ধাক্কা খাবে। ‘‘ফুটবল কিন্তু ক্রিকেট বা টেনিস নয়। ফুটবল অত্যন্ত গতিশীল খেলা। এ রকম দ্রুতগতির খেলায় মাঝে মাঝে ছন্দপতন ঘটলে কিন্তু সমস্যা হয়ে যাবে। ফুটবলারদের হাতে যদি আবেদন করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে সেই গতি ধাক্কা খাবে। সে জন্য ভার নেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে রেফারিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক,’’ বলেছেন তিনি।
প্রায় একই কথা বলছেন মোরিয়েন্তেসও। স্পেন এবং রিয়াল মাদ্রিদের প্রাক্তন স্ট্রাইকার মনে করেন, ফুটবলারদের আবেদন করার ক্ষমতা দিলে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা হবে। ফুটবলারদের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে। সময়ও অহেতুক নষ্ট হবে। পাশাপাশি ভার নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে মোরিয়েন্তেসের মন্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে ভার-এর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। প্রযুক্তি শুধু ভিডিয়োর সাহায্যে ঘটনাটা তুলে ধরছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রেফারিই নিচ্ছে। সেটা ঠিক না ভুল, তা অন্য ব্যাপার।’’ ক্রীড়া বিজ্ঞানীরা আরও একটা প্রশ্ন তুলেছেন ভার নিয়ে। ফুটবলের মতো গতিশীল খেলা হঠাৎ থেমে গিয়ে ফের চালু হলে ফুটবলারদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে কি না। আপনাদের কী মনে হয়? ওয়েস্টউ়ড মনে করেন, হবে না। ‘‘দু’-তিন মিনিটের জন্য ম্যাচ যদি এক আধবার বন্ধও হয়ে যায়, তা হলেও ফুটবলারদের কোনও সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। বরং তার পরে আবার পূর্ণ গতিতে খেলা শুরু করতে পারে ওরা।’’