সহস্ত্র শিশু চরম ঝুঁকি নিয়ে গমন করছে বিদ্যালয়

নিপুণ চন্দ্র, দশমিনা (পটুয়াখালী):
'ইসকুলে গ্যালে বিস্কুট পাই, সাতঁরাইয়া তাই ইসকুলে যাই' বললেন পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার গুলি আউলিয়াপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুবাইদা খানম। প্লাবনের পানিতে বিদ্যালয় সংলগ্নের মাঠ ডুবে যাওয়ায় প্রায় সহস্ত্র শিশু চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। জানা গেছে, ১৯৭০ সালে তেঁতুলিয়া নদীর পশ্চিম কূল ঘেঁষে উপজেলার রণগোপালদি ইউনিয়নে স্থাপিত হয় ৪৪ নং গুলি আউলিয়াপুর আদর্শ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকাসহ প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরেও বিদ্যালয়ের পাশে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ না করায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবন দেখা দেয়। প্রতি বছর এই সময়ে ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালয় বিমূখ হয়ে পরে। গত বছর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হলে বিদেশী দাতা সংস্থার অর্থায়নে ফিডিং প্রকল্পের আওতায় শিশুদের মধ্যে বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও শতভাগ শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনতে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে এ বছর প্লাবনের পানি বাধা হচ্ছেনা। গতকাল বুধবার সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে মাঠসহ পার্শ্ববতী এলাকা পানিতে সয়লাব। ঘুর্ণিঝড় কোমেন'র প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে বাড়তি পানি উঠছে বলে জানান স্থানীয়রা। বিদ্যালয়ের আসা সকল শিশুরা ভেঁজা কাপরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। ছুটি হলে আবার সাঁতরে বাড়ি ফেরা শিশু তৃতীয় শ্রেণির নাঈম হোসেন, জুবাইদা খানম, রিপা আক্তার, রিফাত, বশির, ৪র্থ শ্রেণির গোলাম রাব্বি, রেদোয়ান, শাকিল, পঞ্চম শ্রেণির ফারহানা ইয়াসমিন, জান্নাতুল ফেরদাউস, তামান্না, মাহিনুরসহ ত্রিশোর্ধ ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা হয়। তাদের মধ্যে জুবাইদা খানম বলেন, ইসকুলে গ্যালে বিস্কুট পাই, সাতঁরাইয়া তাই ইসকুলে যাই। কেউ মা-বাবার চাপে, কেউ শিক্ষকদের ভয়ে, কেউ বিদ্যালয়ে আসলে ভাল লাগে বলে জানান। নি¤œ আয়ের উপজেলায় পরিবার প্রধানরা অস্বচ্ছলতা ও অসচেতনতার কারণে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ প্লাবন এলাকা পারাপার না করে দিলেও বই যাতে না ভেঁজে এজন্য পলিথিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রাহিমা বেগম জানান, বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা চরম ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। পা পিছলে অধিক পানির খাদে পাড়ে যেকোন সময় বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ফকরুদ্দিন মোবারক শাহ জানান, ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করেছে সরকার। ভবনের ছাদ ও দেয়ালের পালোস্তর খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এ বিষয় ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম সর্দার বলেন, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড. মো. সাখাওয়াত হোসেনকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও চর হাদি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর হাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর শাহজালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর শাহজালাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ঘুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরবোরহান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সহস্ত্রাধিক শিশু প্লাবনে পানি সাঁতরে বিদ্যালয়ে গমনের খবর পাওয়া গেছে।
 
Top