জানলা ছাড়া একটা ঘর। তারের জাল দিয়ে তার মধ্যে তিনটে খাঁচা বানানো। এক একটায় ২০ জন করে বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন কন্যাসন্তান। সব চেয়ে ছোটটি তিন বছরের!
টানা তিন দিন ঠিকমতো খাওয়া-ঘুম নেই ওদের। ঘরের মধ্যে হাড়হিম করা ঠান্ডা। তাই মেয়েদের কাছে ওটা ছিল ‘বরফের বাক্স’ (আইসবক্স)। এল সালভাডর থেকে আমেরিকায় এসেছিল বছর পনেরোর মেয়েটি। তার পর মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওয়াশিংটনের সিয়াটলের ফেডারেল কোর্টে তদন্তকারীদের সে-ই এই সব তথ্য জানিয়েছে। মায়ের সঙ্গে ফের কবে দেখা হবে, সে জানত না। ওই কিশোরীর মতো বাকিদেরও বাবা-মা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। তদন্তকারীদের ফাইলে আদ্যক্ষর ‘জি’ দিয়ে তার পরিচয় লেখা। মেয়েটি বলেছে, ‘‘ওই ঘরে ভীষণ ঠান্ডা লাগত। সারাক্ষণ এসি চালিয়ে রাখত। শুধু একটা করে ম্যাট আর অ্যালুমিনিয়াম চাদর দিয়েছিল।’’ ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন ওদের বয়ান শুনে হলফনামায় লিখেছেন, ‘‘বাচ্চাগুলো খুব কাছাকাছি ম্যাট নিয়ে শুত। কারণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে শোয়ার মতো জায়গাও ছিল না।’’
![]() |
ক্রয় করুন http://www.bongshi.org থেকে |
১৫ বছরের কিশোরী জানিয়েছে, ভোর চারটে নাগাদ ম্যাটে ধাক্কা মেরে তাদের জাগিয়ে দেওয়া হত। শিশুরা সংখ্যায় ঠিকঠাক আছে কি না, গুনে দেখা হত তখন। দুপুরের সামান্য খাবার দিতে ফের ডেকে তোলা হত ক্লান্ত শিশুদের। রক্ষীরা ফোনের কাছে ঘেঁষতেও দিত না।
এল সালভাডর থেকেই আসা মারিসেলা বাত্রেস নামে এক মা গত মে মাসে আট বছরের ছেলের থেকে আলাদা হয়ে যান। হলফনামায় তিনি বলেছেন, ‘‘দেশে যে স্টোর চালাতাম, তার জন্য তিনশো ডলার ভাড়া চাইছিল দুষ্কৃতীরা। নইলে মেরে দেওয়ার হুমকি। ভয়ে পালিয়ে আসি আমেরিকায়।’’ সীমান্তে তাঁদের আটকানোর পরে খাঁচার মতো জিনিসেই থাকতে দেওয়া হয় বলে মারিসেলার দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘মাটিতে অ্যালুমিনিয়াম চাদরে শোয়া। তার পর জানাল, বাচ্চাদের নিয়ে যাবে। সীমান্ত পেরোনোর ওটাই নাকি শাস্তি।’’
নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারা আন্ডারউড জানিয়েছেন, একটি শিশুর কথা। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসার পরে তাকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই তিন তলা বাড়ির জানলা থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে সে। আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। গুয়াতেমালার ১৭ বছরের এক কিশোরীকে তার বাবার থেকে আলাদা করে অন্য মেয়েদের সঙ্গে রাখা হয়। সে বলেছে, ওখানে রক্ষী তাদের ভয় দেখাত। রক্ষীরা তাদের জেলে ভরারও হুমকি দিত। ‘‘ভয় পেয়ো না। ওরা মিথ্যে বলছে,’’— এক মহিলা-রক্ষী বাচ্চাদের শান্ত করেছিলেন এইটুকু সান্ত্বনা দিয়ে।